দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ব্রহ্মা বৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী কাশ্যপ ঋষির এক অভিশাপের কারণে নিজের সন্তানের শিরোশ্ছেদ করেন মহাদেব। কিন্তু কেন মহাদেবকে অভিশাপ দিয়ে ছিলেন ঋষি কাশ্যপ, কী ভাবে তা থেকে মুক্তি পেলেন দেবাদিদেব? সে সবই বিস্তারিত জেনে নিন এখানে।
শিবের অভিশাপের কাহিনি
বৈবর্ত্য পুরাণ অনুযায়ী মালী ও সুমালী নামে দুই রাক্ষস ছিল। তারা দুজনেই শিবভক্ত। একদা তারা শিবের স্মরণে এসে সূর্যের নিন্দা শুরু করে দেন। তারা জানায় যে, স্বরাশিতে সূর্যের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তাদের শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে হয়। সূর্যদেব চাইলে তাদের কষ্ট কম করতে পারেন। সূর্যের কারণে তারা যাতে অধিক কষ্ট ভোগ না-করেন, তা নিশ্চিত করার জন্য শিবের কাছে প্রার্থনা করেন।
শিব সূর্যকে বোঝানোর জন্য তাঁর কাছে যান। সূর্য জানান যে মালী-সুমালী শিব ভক্ত হলেও তারা নিষ্ঠুর রাক্ষস ও তাদের নিজের অপরাধের জন্য দণ্ড ভোগ করতেই হবে। নিয়ম অনুযয়ী সূর্য নিজের স্বাভাবিক গতিতেই রাশি পরিবর্তন করে থাকেন, তাই এ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ কোনও সাহায্য করতে পারবেন না। সূর্যের এই বাক্য অহংকারে পরিপূর্ণ ছিল। যা শুনে শিব ক্ষুব্ধ হন ও সূর্যকে ত্রিশূল দিয়ে প্রহার করেন।
ত্রিশূলের প্রহারে শিবের শিরোশ্ছেদ হয়। সূর্য প্রাণ ত্যাগ করলে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই ঘটনা দেখে ব্রহ্মার পৌত্র ও সূর্যের পিতা কাশ্যপ দুঃখিত হন। নিজের পুত্রের মাথা কাটা দেখে কাশ্যপ ঋষি কষ্ট পান ও মহাদেবকে অভিশাপ দিয়ে বসেন। কাশ্যপ ঋষি বলেন, যে ভাবে এক পিতা হয়ে তিনি নিজের পুত্রকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে কষ্ট ভোগ করছেন, এক দিন ঠিক এ ভাবেই মহাদেব এই স্থিতিতে নিজের সন্তানকে দেখে কষ্ট পাবেন। অন্য কেউ নয়, বরং নিজের পুত্রের এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী হবেন মহাদেব নিজেই।
পিতার পীড়া দেখে মহাদেব ব্যাকুল হয়ে যান। তখন সমস্ত দেবতা শিবকে বলেন যে, সূর্যদেবের অনুপস্থিতিতে সমগ্র পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে, এর ফলে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হবে না। এর পরই সূর্যের ঠান্ডা হয়ে যাওয়া শরীরকে জীবিত করে তোলেন তিনি।
প্রাণ ফিরে পাওয়ার পর নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হন শিব। তিনি বোঝেন যে, অহংকারের কারণে শিবের অবহেলা করেছেন তিনি। শিবের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিজের বাবাকে সমস্ত ঘটনা জানান সূর্যদেব। তার পর শিবকে দেওয়া অভিশাপের দ্বারা যে বিধ্বংস হবে, তা কম করার অনুরোধ জানান সূর্যদেব।
এর পরই কাশ্যপ ঋষি জানান যে, তিনি নিজের অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না, কিন্তু যে ভাবে মহাদেব তাঁর পুত্রের প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন, তেমনই শিবও নিজের সন্তানকে জীবিত করতে পারবেন। পৃথক স্বরূপের কারণে ঘরে ঘরে তাঁর পুত্রের পুজো হবে।
অবশেষে সূর্য মালী-সুমালীকে বলেন যে, তারা নিজের কুকর্ম ত্যাগ করে নিয়ম মেনে সূর্য ও শিবের আরাধনা করলে তাদের সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি সম্ভব হবে। এর পরই মালী-সুমালী শিব ও সূর্যের স্তুতি শুরু করে।