দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: আগামী ২০ অক্টোবর কালীপুজো অনুষ্ঠিত হবে। তার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ১৯ অক্টোবর, রবিবার পালিত হবে ভূত চতুর্দশী। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি হওয়ায় কালীপুজোর পূর্বদিনটিকে ভূত চতুর্দশী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেক অঞ্চলে এই দিনকে নরক চতুর্দশী নামেও ডাকা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী,নরকের দ্বার খুলে যায় এবং ভূত-প্রেত মর্ত্যে প্রবেশ করে। তাই সন্ধ্যার পর বাইরে যাওয়া এ দিনে সাধারণত নিষিদ্ধ।
ভূত চতুর্দশীতে বাঙালিরা বিশেষ রীতি পালন করে। এদিন ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং ১৪ রকমের শাক খাওয়ার প্রথা রয়েছে। সন্ধ্যার পর বাড়ির বিভিন্ন কোণে মোট ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। তবে প্রশ্ন ওঠে, কেন এদিন ১৪ রকম শাক খাওয়ার রীতি এবং ১৪টি প্রদীপ জ্বালানোর প্রচলন? এছাড়া, এই ১৪ ধরনের শাকের মধ্যে কোন কোন শাক থাকতে হবে? এই সমস্ত তথ্যই আজ আমরা জানব।
• ভূত চতুর্দশীতে কেন ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়?
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে ভূত চতুর্দশীর দিনে কিছু সময়ের জন্য স্বর্গ ও নরকের দ্বার খুলে যায়, তখন আত্মারা মর্ত্যে নেমে আসেন। ভূত-প্রেত নিয়ে এ দিন রাজা বলিও মর্ত্যে আসেন বলে মনে করা হয়। এই দিনে অশুভ শক্তির প্রকোপ বৃদ্ধি পায় বলে একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। এই অশুভ শক্তিকে নিজের বাড়ি থেকে দূরে রাখতেই ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। যেহেতু দিনটি চতুর্দশী, তাই ১৪টি প্রদীপই জ্বালানো হয়। অন্য একটি ধারণা অনুসারে ভূত চতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পূর্বপুরুষরা, সেদিনই ফিরেও যান তাঁরা। অমাবস্যার আগের রাতে অন্ধকারে তাঁদের পথ দেখাতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। যে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়, সেই বাড়ির সদস্যরা যে তাঁদের প্রয়াত পূর্বপুরুষদের ভুলে যায়নি, তা প্রমাণিত হয়।
আবার ভূত চতুর্দশী তিথিটি অনেক জায়গায় যম চতুর্দশী নামেও পরিচিত। এই দিনে যমরাজের নামে প্রদীপ জ্বালালে অকাল মৃত্যুর ভয় এড়ানো যায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এদিন ১৪ জন যমের উদ্দেশে তর্পণের রীতি আছে। এই ১৪ যম হলেন, ধর্মরাজ, মৃত্যু, অন্তক, সর্বভূতক্ষয়, বৃকোদর, বৈবস্বত, উড়ুম্বর, কাল, যম, দধ্ন, পরমেষ্ঠী, নীন, চিত্র ও চিত্রগুপ্ত। পদ্মপুরাণে বলা আছে ভূত চতুর্দশীতে গঙ্গা স্নান করলে নরক যন্ত্রণা কম সহ্য করতে হয়।
• ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাক কেন খাওয়া হয়?
ভূত চতুর্দশীর দিনে ১৪ ধরনের শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এই ১৪টি শাক হল - ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দা, নিম, সরষে, শালিঞ্চা বা শাঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু বা ভাঁট, হিঞ্চে, শুষনি, শেলু। এই ১৪ শাক ঋতু পরিবর্তনের সময় খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে। আসলে হেমন্তকালের এই সময় তখন আস্তে আস্তে শীত পড়ে। এই সময় সর্দি কাশি-সহ নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই সব রোগ মোকাবিলার জন্যই শাস্ত্রকাররা এদিন ১৪ শাক খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।