
কলকাতা, ৩০ ডিসেম্বর : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০২৫ সালটা খুবই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এই বছরে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। এসব অবসর কেবল কয়েকজন খেলোয়াড়ের বিদায় নয়, বরং অনেক দলের জন্যই একেকটি সফল যুগের সমাপ্তি।
রোহিত শর্মা (ভারত): রোহিত শর্মা বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৫ সালের মে মাসে টেস্ট ক্রিকেট ছাড়েন। ইংল্যান্ড সফরের দল থেকে বাদ পড়ার দিনই তাঁর অবসর ঘোষণা আসে। তিনি ৬৭ টেস্টে ৪,৩০১ রান করেন, গড় ৪০.৫৭, শতক ১২টি, অর্ধশতক ১৮টি। ২০১৯ সালের পর ওপেনার হিসেবে দুর্দান্ত সাফল্য পান এবং ২৪ টেস্টে নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে তিনি ওয়ানডে খেলে যাচ্ছেন।
বিরাট কোহলি (ভারত): বিরাট কোহলি ২০২৫ সালের মে মাসে, আইপিএলের মাঝপথে এবং ইংল্যান্ড সফরের ঠিক আগে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন। তিনি ভারতের হয়ে ১২৩টি টেস্টে ৯,২৩০ রান করেন, গড় ৪৬.৮৫, শতক ৩০টি ও অর্ধশতক ৩১টি। ৬৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ৪০টি জয় এনে দেওয়া কোহলি ইতিহাসের অন্যতম সেরা ভারতীয় টেস্ট ব্যাটার হিসেবে অবসর নেন। এখনও ওয়ানডে খেলে যাচ্ছেন তিনি।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত): রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত মরসুমের শেষদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ১০৬ টেস্টে ৫৩৭টি ও একদিনের ক্রিকেটে ১১৬ ম্যাচ খেলে ১৫৬টি উইকেট নিয়েছেন। ২০২৫ আইপিএলে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর তিনি আইপিএল থেকেও সরে দাঁড়ান, ফলে ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটে। বিগ ব্যাশে খেলার কথা থাকলেও চোটের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
চেতেশ্বর পূজারা (ভারত): চেতেশ্বর পূজারা ২০২৫ সালের ২৪ আগস্ট সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি ১০৩ টেস্টে ৭,১৯৫ রান করেন, গড় ৪৩.৬০, শতক ১৯টি। ভারতের মিডল অর্ডারের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে তাঁর অবদান স্মরণীয়।
বরুণ অ্যারন (ভারত): ভারতীয় ফাস্ট বোলার বরুণ অ্যারন ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি সব ধরনের প্রতিনিধিত্বমূলক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৯টি টেস্ট ও ৯টি ওয়ানডে খেলেন। চোট তাঁর কেরিয়ারের বড় বাধা ছিল।
ঋদ্ধিমান সাহা (ভারত): উইকেটকিপার-ব্যাটার ঋদ্ধিমান সাহা ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি ভারতের হয়ে ৪০টি টেস্টে ১,৩৫৩ রান করেন এবং স্পিন সহায়ক উইকেটে অসাধারণ কিপিংয়ের জন্য প্রশংসিত ছিলেন।
অমিত মিশ্র (ভারত): লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র ২০২৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি ভারতের হয়ে ২২ টেস্ট, ৩৬ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এবং আইপিএলে তিনটি হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েছেন।
মোহিত শর্মা (ভারত): ফাস্ট বোলার মোহিত শর্মা ২০২৫ সালের ৩ ডিসেম্বর আইপিএল সহ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি একাধিক আইপিএল দলে খেলেছেন এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত ছিলেন।
মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড): মার্টিন গাপটিল ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৯৮টি ওয়ানডে ও ১২২টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এবং তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১০,০০০-এর বেশি রান করেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ২৩৭ রানের ইনিংসটি তার কেরিয়ারের সেরা স্মৃতি।
দিমুথ করুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা): শ্রীলঙ্কার ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে নিজের ১০০তম টেস্ট খেলার পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সব সংস্করণ থেকে অবসর নেন। তিনি টেস্টে ৭,২২২ রান করেন এবং একাধিক সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেন।
শাপুর জাদরান (আফগানিস্তান): বাঁহাতি পেসার শাপুর জাদরান ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন। তিনি ৪৪ ওয়ানডে ও ৩৬ টি-টোয়েন্টিতে মোট ৮০ উইকেট নেন।
তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ): তামিম ইকবাল ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, যা কার্যত তাঁর পেশাদার ক্রিকেট জীবনের ইতি টানে। বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে তিনি ১৫,০০০-এর বেশি রান করেছেন এবং দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসেবে পরিচিত।
মাহমুদউল্লাহ (বাংলাদেশ): অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তিনি আগেই ২০২১ সালে টেস্ট ছাড়েন এবং সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভরসা ছিলেন।
ডগ ব্রেসওয়েল (নিউজিল্যান্ড) : এই বছরের শেষে এসে নিউ জিল্যান্ডের পেস বোলিং অলরাউন্ডার ডগ ব্রেসওয়েল সব ধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় বলে দিলেন।
২৮ টেস্ট, ২১ ওয়ানডে ও ২০ টি-টোয়েন্টি খেলে শেষ হলো তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। উজ্জ্বলতম স্মৃতি ২০১১ সালের হোবার্ট টেস্ট। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি মাইকেল ক্লার্কের দলের বিপক্ষে। ২৬ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াতে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট জয় ছিল সেটি। এখনও পর্যন্ত সেটিই হয়ে আছে সর্বশেষ। ৭৪ উইকেট নিয়ে শেষ হলো তাঁর টেস্ট কেরিয়ার। ওয়ানডে উইকেট ২৬টি, টি-টোয়েন্টিতে ২০টি।
