দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সকালের রোদ্দুর দেখেই কেউ বারান্দায় সারি দিয়ে তুবড়ি সাজিয়েছেন, কেউ আবার বিকেলে বাজি বাজারে ঘুরে কিনে এনেছেন রংমশাল—আলোয় ভরপুর উৎসবে মেতে উঠতে প্রস্তুত আট থেকে আশি। তবে সামান্য অসাবধানতাই উৎসবের আনন্দকে বিষাদে পরিণত করতে পারে। তাই নিয়ম মেনে বাজি পোড়ানো এবং আগুন সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। তবুও, যদি শরীরের ৫ শতাংশ বা শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়, তা হলে সেটিকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। বাজি ফাটার সময় আগুনের ফুলকি দ্বারা হাত-পা পুড়ে গেলে বা হঠাৎ ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত তৈরি হলে ভয় না পেয়ে শান্ত থাকা এবং সঠিকভাবে পরিস্থিতি সামলানো দরকার। কীভাবে সতর্ক থাকতে হবে, সেই বিষয়ে আগে থেকেই জেনে রাখা শ্রেয়।
আগুন থেকে সতর্কতা-
বাজির কাছাকাছি মোমবাতি বা প্রদীপ রাখবেন না। এগুলি বাজির বারুদের সংস্পর্শে চলে এলে অঘটন ঘটতে দেরি হবে না।
একসঙ্গে অসংখ্য মোমবাতি জ্বালিয়ে বাজি পোড়াবেন না। অনেক সময় এর থেকে জামাকাপড়েও আগুন লেগে যায়।
বাজি জ্বলতে না চাইলে তাতে ফের আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তুবড়ি বা হাউই জ্বালাতে হলে মুখ দূরে রেখে জ্বালান।
বাজিতে আগুন দেওয়ার সময় আপনার মুখ এবং শরীর বাজি থেকে দূরে রাখুন। শিশু বা বয়স্কদের ফুলঝুরি বা রংমশালের মতো আলোর বাজি দিলেও তা পাটকাঠির আগায় লাগিয়ে দিন।
দেশলাই বা লাইটারের বদলে লম্বা পাটকাঠি, মোমবাতি বা ধূপকাঠি ব্যবহার করুন। বাজির উপর মুখ নিয়ে গিয়ে বা ঝুঁকে কখনওই আগুন দেবেন না।
মোম বা প্রদীপ মাটিতে না রাখাই ভাল। বরং উঁচু জায়গায় রাখুন। ছোটরা যেখানে বাজি পোড়াবে, তার কাছাকাছি আগুন না রাখাই ভাল। বরং আপনারাই জ্বালিয়ে তাদের হাতে দেবেন।
পোড়ানো বাজি বা তার অবশিষ্টাংশ যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলবেন না। পোড়ানো শেষে সেগুলিকে তুলে জলে ডুবিয়ে দিন, যাতে ভিতরে থাকা দাহ্য পদার্থ পুরোপুরি নিবে যায়।
বাজি পোড়ানোর স্থানে এক বালতি জল এবং এক বালতি বালি মজুত রাখুন। ছোটখাটো আগুন লাগলে বা পুড়ে গেলে প্রাথমিক মোকাবিলা করতে কাজে আসবে।
অঘটন বলেকয়ে আসে না-
বাজি পোড়ানোর সময়েই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। গায়ে আগুন লেগে যাওয়া, বাজি ফেটে শরীরে ক্ষত হওয়া, বাজির আগুনে চোখ পুড়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে।
বাজিতে পুড়ে গেলে বা শরীরের কোথাও ক্ষত হলে, আতঙ্কে আরও বেশি ভুলভ্রান্তি করে ফেলেন অনেকে। ওই সময়টাতে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। অল্প পুড়লেও অবহেলা করা যাবে না।
পুড়ে গেলে বা ক্ষত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা কী কী?
যতটাই পুড়ুক আর যেখানেই পুড়ুক, পোড়া অংশে ঠান্ডা বরফজল দিন। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, অত্যধিক পুড়ে গেলে বা খুব স্পর্শকাতর স্থান ঝলসে গেলে কখনওই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো উচিত নয়। প্রথম অবস্থায় বোঝা না গেলেও ঘা শুকোনোর সময় এতে ঝুঁকি বাড়ে। আগে বুঝতে হবে, ক্ষতটি মাইল্ড, মডারেট, না সিভিয়র বার্ন। সেই মতো শুরু হবে চিকিৎসা। চামড়ার কতটা অংশ পুড়েছে, তা দেখা দরকার। অনেক সময় শুধু উপরের ত্বক পুড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে জল বা বরফ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়। তবে চামড়ার নীচের মাংসল অংশ পুড়ে গেলে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে।