-:রবীন্দ্র কুমার শীল:-
ক্যান্সার রোগ নিয়ে যতই ভয় থাকুক কিন্তু সেটা এখন ভয়ের কারণ নয়| ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব| আগে কিন্তু ক্যান্সারে বহু লোক মারা গিয়েছে| তখন ক্যান্সার টিকিৎসা তখন উন্নতি লাভ করেনি| কিন্তু এখন ক্যান্সার রোগ হলে ভয়ের কোনও কারণ নেই| চিকিৎসা করলেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি লাভ হওয়া সম্ভব| তবে চিকিৎসা খরচ সাপেক্ষ| ধৈর্য্য ধরতে হবে| সরকারি হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় কোনও খরচ হয় না বটে| কিন্তু ওষুধ কিনতে বেশ অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে| দেখতে পাওয়া গিয়েছে যে ক্যান্সারের চরিত্র ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে না| মানুষের দেহে ক্যান্সার হয়| তার চারভাগের একভাগ চিকিৎসায় ভালো হয় না| কিন্তু তিন ভাগ ভালো হয়| ক্যান্সারের হাত থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা নিয়ে বই লিখেছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শঙ্কর কুমার নাথ| তিনি বলেছেন ক্যান্সার রোগীকে ভালো করা সম্ভব| যেমন টাইফয়েড রোগ এবং টিবি রোগের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেছেন, ক্যান্সার আসলে একটি রোগ নয়| ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়| ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব| ক্যান্সার নিয়ে সচেতনা শিবির তৈরি করা হচ্ছে| পথ নির্দেশিকা তৈরি করছে| কীভাবে ক্যান্সারের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পাবে তা নিয়ে চলছে গবেষনা| নিত্য নতুন ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে| তার ফলে জটিল ক্যান্সার রোগ নিরাময় হতে পারছে| ক্যান্সারকে আমরা ভয় পাই তার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে এটা দ্রুত শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে| মানুষকে একেবারে অকেজো করে দেয়| শক্তিহীন করে দেয়| মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা ক্রমশ কমতে থাকে| ইচ্ছা আর নতুন করে জাগ্রত হয় না| নির্জীব পদার্থে পরিণত হতে শুরু করে| পরনির্ভরশীল হয়েপড়ে| মানুষের বদগুণ এবং অভ্যাসের জন্যই শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধে বলে বিশ্বাস করেন ডাক্তার শঙ্কর কুমার নাথ| সেই কারণে তিনি একটি বই লিখেছেন ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়| প্রতিরোধ| ক্যান্সার রোগের চারভাগের তিন ভাগকে নিরাময় করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন| আসলে মানুষ ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে কোনও ভালো ধারনা নেই| এই ধরনের রোগ হলেই তারা ভ্রুক্ষেপ করে না| তার ফলে ক্যান্সার রোগ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে শরীরের মধ্যে| প্রথম থেকেই যদি ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করা যায় তাহলে কিন্তু এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব|
গত ত্রিশ চল্লিশ বছর ধরে বিশ্বে ক্যান্সার রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি লাভ করতে শুরু করে দিয়েছে| ভারত তার থেকে বাদ পড়ছে না| ভারতেও ক্যান্সার রোগের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি লাভ করতে শুরু করেছে| ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ ‘চরকসংহিতা’কেও ক্যান্সার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়| ভারতের অসামান্য শল্য চিকিৎস ছিলেন তাঁর নাম সুশ্রুত| ‘সুশ্রুত-সংহিতা’ পুস্তকেও রয়েছে ক্যান্সার টিউমারের উল্লেখ| তিনি শুধু উল্লেখই করেনি টিউমারের চিকিত্সার ওষুধের নাম উল্লেখ করেছেন| সবচেয়ে প্রাচীনতম ক্যান্সারের নিদর্শন মেলে মিশরে| এডুইন স্মিথ প্যাপিরাসে আমরা দেখতে পাই তিনটি স্তন টিউমারের উল্লেখ রয়েছে| সেগুলিকে পরে শরীর থেকে স্তনকে বাদ করে দেওয়া হয়েছে| এই সব তথ্য আনুমানিক তিন হাজার খ্রিষ্টপূর্বের ঘটনা| ক্যান্সাৰ শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘কারকিনোস’| যার অর্থ হল টিউমার| চিকিত্সা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন| পাঁচটি পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে ক্যান্সার চিকিত্সা করা হয়| এর মধ্যে রয়েছে -কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনথেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি| এর ফলে ক্যান্সারের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে শুরু করেছে| ক্যান্সারের ওষুধ শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ক্যান্সার কোষগুলিকে ধ্বংস করতে থাকবে| এই সব কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলা যেতে পারে| যে কোন রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হল রোগ তাড়ানো এবং রোগ সারানো| ট্রিটমেন্ট অব ডিজিস এবং প্রিভেনস অব ডিজিস| ক্যান্সারেরোগের মৃত্যুর হাত থেকে হৃদরোগে মৃত্যুর হার বেশি| এখন দেখতে হবে কী কী কারণে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হচ্ছে| প্রথম, তামাকজাত পদার্থের ব্যবহার| আমরা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে থাকে| সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, দোক্তা, খৈনি, পানমশলা, গুটকা, নস্যি, জর্দা ইত্যাদি| যারা পাইপে করে ধূমপান করেন তাদের ঠোঁটে ক্যান্সার হয়| অন্ধ্রপ্রদেশে গ্রামাঞ্চলে চুরুটের জ্বলন্ত দিকটা মুখের ভিতর রেখে নেশা করে| এটাকে বলা হয় ছুট্টা| এই রকম ধূমপায়ীদের টাগরায় ক্যান্সার হয়ে থাকে| ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে যারা পান খান তাদের মুখের ভিতর ক্যান্সার দেখা দেওয়া সম্ভব| সূর্য কিরণ থেকে ক্যান্সার হতে পারে| অতি বেগুনি রশ্ম্রি প্রভাবে ঠোঁটে ক্যান্সার হতে পারে| পেশা থেকে ক্যান্সার হতে পারে| তুলো, উল, কাঠের আসবাসপত্র তৈরি করা শ্রমিকদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি| মুখ গহ্বরে নিয়মিত আঘাত থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে| কৃত্রিম দাঁত যদি ঠিক মতো মুখে খাপ না খায় তাহলে কিন্তু ক্যান্সার হতে পারে| মুখের ভিতরে সাদা বা লাল প্যাচ থেকে ক্যান্সার হতে পারে| সাদা বা লাল প্যাচ থাকলে চিকিৎসা করার খুবই প্রয়োজন| নাহলে কিন্তু ক্যান্সার হতে পারে| খাদ্য ঠিক মতো গ্রহণ না করলে ক্যান্সার হতে পারে| এ,সি,ই খাদ্য ঘাটতি থাকলে ক্যান্সার দেখা দেখা দিতে পারে| শাকসব্জী খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে| ভাইরাস থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে| হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস নামক একটি জীবানু থেকে মুখের ভিতরে ক্যান্সার হয়ে থাকে| মুখের স্বাস্থ্য সঠিকভাবে রাখার খুবই প্রয়োজন| এক্স-রে থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে| মুখ গহ্বরের ক্যান্সারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে একমাত্র উপায় হচ্ছে তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ না করা|
সামুদ্রিক মাছ এবং ভাত ডালের মধ্যেই ভিটামিন রয়েছে| তাও খাওয়া যেতে পারে| মহিলাদের বেশি করে জরায়ু ক্যান্সার দেখতে পাওযা যায়| ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টি হয় ধূমপান থেকে| ফুসফুস ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাত্র উপায় হল ধূমপান একেবারে বন্ধ করে দেওয়া|
নিঃশ্বাস গ্রহণ কালে এই পদার্থ গ্রহণ করে থাকি| সেই কারণে উচিত কাজ হচ্ছে অ্যাসবেসটস থেকে দূরে থাকা| কারখানাজাত পদার্থ থেকে ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে| আর্সেনিক, নিকেল, কয়লাজাত পদার্থ থেকে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে| ফুসফুসে যক্ষা হয়েছে এই রকম রোগের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে| ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে গেলে হালকা ব্যায়াম করা উচিত| রোজ এটা করতে হবে একেবারে ঘড়ি ধরে| নাহলে কিন্তু শরীরকে সুস্থ রাখা যাবে না| শরীরকে সুস্থ রাখতে গেলে স্বাস্থ্য চর্চা অতি অবশ্যই করার খুবই প্রয়োজন|
ক্যান্সার থেকে নিজেকে বাঁচাতে শাকসবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করুন| কুমড়ো, গাজর এবং টমেটোতে অতিরিক্ত পরিমান ক্যান্সার প্রতিরোধ করার মতো গুণ রয়েছে| রেড মিট খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে মাসে মধ্যে একটি দিন দুই পিস খান| তার বেশি গ্রহণ করবেন না| গ্রিন টি ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে| রোজ এক কাপ করে গ্রিন টি খেলে শরীর সুস্থ থাকবে|
মহিলাদের বেশি করে স্তন ক্যান্সার হয়| এই স্তন ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে গেলে দ্রুত চিকিৎসা করার খুবই প্রয়োজন| দেখতে পাওয়া গিয়েছে যে ভারতের অধিকাংশ মহিলারা স্তন ক্যান্সার হলে তা চেপে রাখেন| প্রকাশ করতে দেন না| ডাক্তারের কাছেও গিয়ে উপস্থিত হন না| তার ফলে বহু মহিলা মারা যায় | যা চিকিৎসা করে সারানো সম্ভব ছিল তাকে একেবারে অসম্ভবে পরিণত করে ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করানোয়| চর্বিজাত খাবার খাওয়া কমাতে হবে| নাহলে কিন্তু এর হাত থেকে রেহাই নেই| কিন্তু মাছের চর্বি বা তেল কিন্তু স্তন ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করে| সেই কারণে উচিত হচ্ছে প্রতিদিন রান্নাতে একটি করে মাছ থাকা খুবই প্রয়োজন| লাল টমাটোতে লাউকোপিন নামক এক পদার্থ রয়েছে যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে|তবে এক্ষেত্রে শরীর চর্চা হচ্ছে মহাষৌধ| এটা করলে পারলে সব রোগ থেকে অতি সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব| ওষুধ খাওয়ার খুব একটা বেশি প্রয়োজন পরে না| যারা বহু ধরনের ওষুধ খান তাদেরকে ওষুধের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র শরীর চর্চা|
এছাড়াও মাতৃদুগ্ধ পান করালে ও স্তন ক্যান্সার কমতে পারে বলে মনে করেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাথ| মদ পান করলে স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধি লাভ করে| প্রতি মাসে চার লিটারের বেশি মদ পান করলে স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে|
এই রোগটিকে কেউ কেউ বলে থাকেন জেনেটিক| বংশ পরম্পরায় হতে থাকে| নিয়মিত অ্যাসপিনি জাতীয় ওষুধ খেলে এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব| ভিটামিন ডি যুক্ত খারার খেতে হবে| আজকাল ফাস্ট ফুড রাস্তার ঢালাও করে বিক্রি হচ্ছে| লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে খেতে থাকে ফাস্ট ফুড| ছেলেমেয়েরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে ফাস্ট ফুডের ওপরে| এর থেকে পরিবারকে রেহাই দিতে হবে| নাহলে কিন্তু ক্যান্সার প্রতিরোধ করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে| এক্ষেত্রে পোলট্রির মাংস খান চর্বি ছাড়া| রেডমিট খাওয়া কমিয়ে ফেলুন| প্রচুর আঁশ যুক্ত খাবার খান| তামাকজাত নেশা থেকে ক্যান্সার হতে পারে| তার দিকে বিশেষ নজর রাখা খুবই প্রয়োজন|
অনেক ক্ষেত্রে পেশাগত ক্যান্সার দেখা যায়,বিশেষ করে যারা কলকারখানায় কাজ করেন তাদের এই রোগ হবার একটা প্রবনতা তৈরী হয়, এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি মাত্র উপায় হল কলকারখানা থেকে নিয়ম করে বের হয়ে এসে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করা|
মোবাইল ফোন ব্যবহার করা দিকে বেশি করে নজর দিতে হবে| যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদেরকে বলা হয় মোবাইল ফোন কাছে রাখবেন না ঘুমানোর সময়ে| মোবাইল ফোন ঘুমের সময়়ে কাছে রাখলে ব্রেন ক্যান্সার দখা দিতে পারে| বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলেছে যে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীরা বেশি করে আক্রান্ত হতে শুরু করে দিয়েছেন|
পরোক্ষ ধূমপান ক্যান্সার রোগের অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচিত| যাঁরা ধূমপান করেন না তারা যদি কোনও ধুমপায়ীদের পাশে বসেন তাহলে যে ধূমপান করছেন তার ধোঁয়া নাকের মধ্যে প্রবেশ করে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে দেয়| কীটনাশক থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে| ফলমূল থেকে কীটনাশক উদ্ধার করতে গেলে তাকে ভালো করে ধুয়ে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে| আমরা সতর্ক হলে ক্যান্সাররে হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো এটাই হোক বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের মুখ্য অঙ্গীকার|