দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- পরলোক গমন করেছেন টাটা গ্রুপের
মালিক রতন টাটা। আর রেখে গেছেন টাটা গ্রপের সুবিশাল সম্পত্তি। অবিবাহিত রতন টাটার সম্পত্তি
দেখভাল করবেন কে? এই নিয়ে নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। অবশেষে সেই উওরসূরীর নাম সামনে
এল।
তিনি হলেন শান্তনু নাইডু। রতন টাটার অফিসের কনিষ্ঠতম জিএম,
জেনারেল ম্যানেজার।
শান্তনু
নাইডু পুণের বাসিন্দা শান্তনু এক জন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পড়াশোনা পুণে বিশ্ববিদ্যালয়
থেকেই। শান্তনু টাটা এলেক্সিতে কাজ শুরু করেন এক জন জুনিয়র ডিজ়াইনার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে।
তখন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ছিলেন রতন টাটা। তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব তো দূর অস্ত্ নজরে
পড়াও দিবাস্বপ্ন ছিল তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। তবে সুযোগ তৈরি হয়। সংস্থার জুনিয়র কর্মী।
রাতের ডিউটিই থাকত বেশি। কাজের ফাঁকে রাস্তার কুকুরদের দেখভাল করতেন। সেই সময়েই শান্তনু
খেয়াল করেন তাঁর অফিস চত্বরে প্রায়ই কিছু কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। ঘটনাগুলো
ঘটে মূলত রাতের দিকে। পশুপ্রেমী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ঠিক করেন এর সমাধান করবেন।
শান্তনু ঠিক করেন রাস্তার কুকুরদের আলো জ্বলা কলার পরানো
হবে। যাতে রাতের অন্ধকারেও তাদের দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কলার বানাবে কে? কেই বা পরাবে?
রাস্তার কুকুরদের দেখভালের জন্য সমমনস্কদের নিয়ে তৈরি করে
ফেলেন একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'মোটোপজ়'। এই 'মোটোপজ়'-ই জীবন বদলে দেয় শান্তনুর।
এই 'মোটোপজ়'-ই জীবন বদলে দেয় শান্তনুর। সংস্থা তৈরি হলেও
টাকা ছিল না। কলার যে বানানো হবে তার জিনিস আসবে কোথা থেকে! বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেঁড়া
জিন্স জোগাড় করে আনেন শান্তনুরা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাতে জোড়া হয় অন্ধকারে জ্বলে
এমন কাপড়। তৈরি হয় কলার। শান্তনুদের এই উদ্যোগ পুণের টাটা এলেক্সি কর্তৃপক্ষের নজর
কাড়ে। সংস্থার নিউজ়লেটারে জায়গা করে নেয় ঘটনাটা। নজরে পড়ে তৎকালীন চেয়ারম্যান রতন
টাটারও। রতন নিজেও পশুপ্রেমী। তাঁর সংস্থার এক কর্মীর এমন উদ্যোগের কথা জেনে রতন নিজেই
যোগাযোগ করেন শান্তনুর সঙ্গে। তাঁদের কাজকর্মের বিশদ জানাতে বলেন।
সেই শুরু। শান্তনুর সঙ্গে দেখা হয় রতন টাটার। তাঁদের সংস্থাকে
অর্থসাহায্য করেছিলেন রতন। তবে টাটা গোষ্ঠীর তরফে নয়। শান্তনুদের তিনি সাহায্য করেছিলেন
ব্যক্তিগত ভাবে। সম্পূর্ণ নিজের অর্থ থেকে। এর পরে ইমেলে প্রায়শই কথা হতে থাকে দু'জনের।
প্রথমে তাঁদের সংস্থার কাজ নিয়ে, পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিষয়ে ভাবনাচিন্তা বিনিময়,
এমনকি একটা সময়ে ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্নোত্তরের পর্যায়েও পৌঁছে যায় কথাবার্তা। তবে
টাটার সঙ্গে সম্পর্কে এর পর কিছু দিনের জন্য ছেদ পড়ে শান্তনুর। চাকরি ছা়ড়েন তিনি।
উচ্চশিক্ষার জন্য পুণে থেকে আমেরিকায় পাড়ি দেন। ভর্তি হন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঘটনাচক্রে
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন রতন টাটাও। টাটার সঙ্গে সম্পর্কে ছিঁড়লেও দুই বন্ধুর
যোগাযোগে ছেদ পড়েনি। শান্তনুর গ্র্যাজুয়েশনের শেষ দিন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে
গিয়েছিলেন রতন। সে দিনই শান্তনুকে তাঁর সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। রতন টাটার ব্যক্তিগত
বিজনেস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন শান্তনু। গাঢ় হতে থাকে দুই অসমবয়সীর
বন্ধুত্ব।
শান্তনু জানিয়েছেন, রতনের সঙ্গে কাটানো তাঁর মুহূর্তগুলি
তাঁর মা তাঁকে একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে বলেছিলেন। তবে বন্ধুত্ব যত বেড়েছে সংখ্যা
বেড়েছে ডায়েরির। তাঁর বই সেই ডায়েরির পাতা থেকেই সটান তুলে আনা। একসঙ্গে সিনেমা দেখা,
ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের চিন্তাভাবনার সহজ বিনিময়। সেই বন্ধুত্বে ছেদ পড়ল। বুধবার রাতে
প্রয়াত হয়েছেন রতন টাটা। দেশের অন্যতম শিল্পপতিকে হারাল ভারত। আর শান্তনু হারালেন তাঁর
'বাতিঘর'। যদিও শান্তনু উত্তরসূরী হবেন এমন কোনও খবর এখনো তা সামনে আসেনি।