দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ মেয়ে হওয়ার অপরাধ । মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তিন মাসের শিশু । একরত্তিকে আছড়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে তারই মা-বাবার বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালায় । রবিবারই ওই তিন মাসের শিশুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় । পরে পুলিশি জেরায় খুনের দায় স্বীকার করে অভিযুক্ত বাবা-মা ।
রবিবার দুপুরে তিন মাসের এক শিশুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরেই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বাবা রিন্টু শেখ ও তাঁর স্ত্রী বেলুয়ারা বিবিকে গ্রেফতার করেছে ডোমকলের পুলিশ। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে খবর, ভাতশালার রিন্টু শেখ কেরলে কাজ করেন। মাস তিনেক আগে তৃতীয় কন্যাসন্তান জন্ম হয়। সেই খবর পাওয়ার পর সপ্তাহখানেক আগে গ্রামে ফিরেছিলেন রিন্টু। বাবা দবির শেখের দাবি, ছেলে রিন্টুই তাঁর ছোট্ট নাতনিকে আছাড় মেরে খুন করেছেন। খুনে জড়িত পুত্রবধূও। দু’জনের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন দাদু। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পরে দম্পতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বছর সাতেক আগে রিন্টুর বিয়ে হয়েছিল ডোমকলের কামুড়দিয়াড়ের বাসিন্দা বেলুয়ারার সঙ্গে। চার বছর আগে তাঁদের প্রথম সন্তান জন্মায়। মেয়ে। পরের সন্তানটিও মেয়েই। তিন মাস আগে তৃতীয় বার কন্যার জন্ম দেন বেলুয়ারা। পড়শিদের একাংশের দাবি, রিন্টু মাদকের নেশায় আসক্ত। তার খরচ জোগাতে এক বার নিজের বড় মেয়েকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিতে যাচ্ছিলেন এক মহিলার কাছে। পরিযায়ী শ্রমিক কলোনির লোকেরা তা জেনে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। দিল্লিতে রিন্টুর সঙ্গে কাজে গিয়েছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা রিনা পারভিন। তিনি বলেন, ‘‘ও কাজ করতে চাইত না। সারা দিন বসে থাকত আর নেশা করত। বড় মেয়েকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার প্ল্যান করেছিল। আমরা জেনে যাওয়ায় তা পেরে ওঠেনি। খবর পেলাম, ছোট মেয়েটাকে খুন করেছে।’’
দ্বিতীয় মেয়েকেও এক বার মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রিন্টু ও বেলুয়ারার বিরুদ্ধে। সেই কারণে দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ীও ছিল মেজো মেয়ে। এক আত্মীয় সাজিদা খাতুন বলেন, ‘‘হেরোইন, মদ— সব রকমের নেশা করত জামাই। নেশার টাকা জোগাড় করা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গন্ডগোল লেগেই থাকত। তার উপর শিশুদের খাওয়াদাওয়ার খরচ বাড়তি বোঝা মনে হত ওদের। তাই বাচ্চাগুলোকে পর পর খুন করার চেষ্টা করেছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সুখচাঁদ শেখের দাবি, ‘‘নেশার জন্যই এ সব করছে!’’ এ বিষয়ে ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ বলেন, ‘‘রিন্টু নিয়মিত মাদক নিত। চুরির অভিযোগে সে আগে গ্রেফতারও হয়েছে। শুধু কি সংসারে টানাটানি, না এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে তিন মাসের শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বাড়ির লোকজন দেখেন, ঘরে লেপের তলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সে। বেলুয়ারাকে চেপে ধরা হলে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘মেয়েকে খাটে শুইয়ে আমি দাওয়ায় রান্না করছিলাম। কী হয়েছে, জানি না।’’ রিন্টুর বাবা যদিও বার বারই দাবি করেন, ‘‘তৃতীয় বার মেয়ে হওয়ার পর থেকে ছেলে-বৌমার ঝামেলা লেগেই থাকত। ছেলে নিয়মিত নেশা করে। ছেলেই ছোট নাতনিকে খুন করেছে। পুত্রবধূ সব জেনেও ওকে আড়াল করছে।’’ এর পরেই রিন্টু ও বেলুয়ারা বিবিকে পুলিশ প্রথমে আটক করে। ডোমকল থানার পুলিশের দাবি, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভেঙে পড়েন তাঁরা সন্তানকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তার পর রাতে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তাঁদের আদালতে হাজির করানোর কথা।