দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: নদিয়া জেলার চাকদহ এলাকায় এক নবদম্পতির আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। মাত্র ২১ বছরের স্বামী ও ১৯ বছরের স্ত্রীর এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পরিবারে, পাশাপাশি একাধিক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিবেশীদের মনে। ঘটনাটি ঘটেছে চাকদহের তাঁতলা রায়পাড়া এলাকায়। মৃত দম্পতির নাম ইন্দ্রজিৎ রায় ও প্রিয়া রায়।
জানা গিয়েছে, গতকাল সোমবার রাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন ইন্দ্রজিৎ ও প্রিয়া। তারপর যথারীতি তাঁরা নিজেদের ঘরে ঘুমোতে যান। কিছুই অস্বাভাবিক ছিল না রাতের খাবার বা আচরণে। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’জনের পেট জ্বালা ও তীব্র ব্যথা শুরু হয়। দ্রুত অবস্থার অবনতি হতে থাকে। প্রথমে পরিবারের লোকেরা নিজেরাই প্রাথমিক চিকিৎসার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায়, তাঁদের তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল। মাত্র কয়েক মাস বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এই তরুণ দম্পতির এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ইন্দ্রজিতের বাবা-মা ও ভাই একই বাড়িতে থাকেন। তাঁরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন এই ঘটনায়। প্রতিবেশীরাও দিশেহারা হয়ে বলছেন, "একেবারে ভালো সুস্থ ছেলে-মেয়ে, একদিনেই সব শেষ হয়ে গেল!"
ঘটনার খবর পেয়ে চাকদহ থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্তের স্বার্থে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। বিশেষত, কী ধরনের খাবার খেয়েছিলেন তাঁরা, কারা রান্না করেছিলেন, খাবারের পর আর কিছু খাওয়া হয়েছিল কিনা—সব বিষয়েই খুঁটিয়ে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পাশাপাশি, ঘরের ভেতরে কোনও কিছু অস্বাভাবিক পাওয়া গেছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তাঁতলা রায়পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, "যদি কোনও খাবারে বিষ মেশানো থাকে, তাহলে শুধু ওই দু’জনেরই মৃত্যু কেন? বাকিরা সুস্থ রয়েছেন কীভাবে?" কেউ কেউ আবার বলছেন, "অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে, হয়তো আত্মহত্যা! কিন্তু দম্পতির মধ্যে তো কোনও ঝগড়া দেখিনি।" এই মুহূর্তে গোটা ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। সেটি হাতে এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। পুলিশও আপাতত সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে—দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি খুন? এদিকে তরুণ দম্পতির রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের পাশাপাশি ভয় ও উদ্বেগের আবহ তৈরি হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এই ঘটনার প্রকৃত কারণ প্রকাশ্যে আনা হোক এবং দোষী কেউ থাকলে তার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হোক।