
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সব স্মার্টফোনে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক, এইরূপ কেন্দ্রীয় ঘোষণা ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ— সরকারের এই সিদ্ধান্ত নজরদারির আশঙ্কা বাড়াচ্ছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর হামলা হচ্ছে। রাজনৈতিক চাপ বাড়তেই অবশেষে ঢিলে দিয়েছে কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বিতর্কিত অ্যাপটি অপশনাল, ব্যবহারকারী চাইলে ডাউনলোড-ডিলিট দুই-ই করতে পারবেন। তবে বিতর্কের মধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এই অ্যাপের কার্যকারিতা এবং ব্যবহার পদ্ধতি।
ব্যবহার করবেন কীভাবে?
প্রথমে প্লে স্টোরে গিয়ে টাইপ করুন ‘Sanchar Sathi’। ডাউনলোড করুন অ্যাপটি। এরপর নিজের নাম লিখে রেজিস্টার করুন। আপনার মোবাইলে যে সিম রয়েছে, তা স্ক্রিনে দেখতে পাবেন। এরপরই ভেসে উঠবে অ্যাপের ফিচারগুলো।
কী আছে সঞ্চার সাথীতে?
১. প্রথমেই রয়েছে, ‘রিপোর্ট সাসপেক্ট ফ্রড কমিউনিকেশন।’ তাতে ক্লিক করলে খুলে যাবে একটি পেজ। যদি কোনও ফোন বা মেসেজ পেয়ে আপনার ধারণা হয় যে সেটি প্রতারকদের ফাঁদ, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন আপনি।
২. এরপরই পাবেন ‘ব্লক ইওর লস্ট/স্টোলেন মোবাইল।’ তাতে ক্লিক করলে পাবেন চারটি অপশন। ১. ব্লক লস্ট/স্টোলেন মোবাইল। ২. আন ব্লক ফাউন্ড মোবাইল। ৩. চেক রিকোয়েস্ট স্টেটাস। ৪. ফরগট রিকোয়েস্ট আইডি? –এই অপশনগুলোর মধ্যে যেটি প্রয়োজন সেটি বেছে নিয়ে পরবর্তী ধাপগুলো পূরণ করতে হবে।
৩. তৃতীয় অপশনটি হল, ‘নো মোবাইল কানেকশন ইন ইওর নেম’। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিম তুলে নেন অচেনা লোক। জানতেই পারেন না নথির মালিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুয়ো পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তোলা সিমে অপরাধমূলক কাজ করা হয়। এবার অ্যাপের মাধ্যমেই দেখে নিতে পারবেন আপনার নামে কটি সিম। ফলে ভুয়ো নথিতে সিম ব্যবহার বন্ধ করা যাবে বলেই আশাবাদী কেন্দ্র।
৪. চতুর্থ অপশনটি হল ‘নো জেনুইননেস অব ইওর হ্যান্ডসেট।’ সেখানে আপনার মোবাইলের IMEI নম্বর দিলে পাবেন ফোনের বিস্তারিত তথ্য।
৫. শেষ অপশনটি হল, ‘রিপোর্ট ইনকামিং ইন্টারন্যাশনাল কল উইথ ইন্ডিয়ান নম্বর’। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ফোন এলে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ভারতীয় নম্বর। কিন্তু ফোনটি আদতে বিদেশের। মূলত জালিয়াতরাই এভাবে ফাঁদে ফেলে আমজনতাকে। এই অপশনটিতে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যাবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার কেন্দ্র মৌখিক নির্দেশে মোবাইল প্রস্তুতকারকদের জানায়—প্রতিটি স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-ইনস্টল করতে হবে সাইবার সেফটি অ্যাপ ‘সঞ্চার সাথী’। এমনকি গ্রাহক চাইলেও অ্যাপটি মুছতে পারবেন না বলেও জানানো হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বাজারে আসা সব নতুন স্মার্টফোনে অ্যাপটি প্রি-লোড থাকা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রের দাবি, সাইবার প্রতারণা রোধ, চুরি বা হারানো ফোন ট্র্যাকিং এবং নকল ফোনের কালোবাজার ঠেকাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। তবে বিরোধীদের অভিযোগ—সাইবার সুরক্ষার নাম করে মোদি সরকার আসলে সাধারণ মানুষের ফোনে নজরদারি চালাতে চাইছে। ব্যাপক সমালোচনার পর শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে কেন্দ্র। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, “এই অ্যাপ ফোনে রাখা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। তবে কেউ তা ব্যবহার করবেন কি না, সেটি সম্পূর্ণ গ্রাহকের সিদ্ধান্ত।”
