Life Style News

4 hours ago

Therapy Solution: বয়স বাড়লে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি? থেরাপিই হতে পারে সমাধান!

Testosterone deficiency as you age
Testosterone deficiency as you age

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভালবাসার কোনও নির্দিষ্ট বয়স হয় না—এ কথা বহুবার বলা হলেও, তা আবার প্রমাণ করে দিয়েছেন কয়েক জন পরিচিত মুখ। একসঙ্গে পথচলার সিদ্ধান্ত জীবনের যে কোনও পর্যায়ে নেওয়া যেতেই পারে। সংসার শুরু করার জন্য তথাকথিত 'সঠিক বয়স' বলে যে একটা ছক তৈরি হয়েছে সমাজে, সাম্প্রতিক সময়ে তা ভেঙে দিচ্ছেন অনেকেই।

৬১ বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অপর দিকে, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও ৫১ বছরে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে, যাঁর বয়স ষাটের কোঠায়। বলিউডেও এর ব্যতিক্রম নেই—৫৩ বছর বয়সে মিলিন্দ সোমন বিয়ে করেছেন ২৬ বছরের অঙ্কিতা কোনারকে। আশিস বিদ্যার্থী, দীপঙ্কর দের মতো আরও অনেকেই আছেন এই তালিকায়।তাঁরা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন—ভালবাসা বা বৈবাহিক সম্পর্কে বাঁধার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।আজও সমাজে একটা ধারণা রয়েছে—এক নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে বিয়ে করলে সেটি 'বিরল' ঘটনা। সম্পর্কের আবেগ বা ভালবাসা বাধা না হলেও, অনেকেই মনে করেন, বয়স বাড়লে শরীরই হয়ে ওঠে প্রধান চ্যালেঞ্জ। কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য বদলে যায়। শক্তি কমে, ক্লান্তি বাড়ে, অনেক সময় মানসিক দিক থেকেও তৈরি হয় টানাপোড়েন।

এই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুধুমাত্র হরমোনের ঘাটতি পূরণই করে না, বরং পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়, শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং বন্ধ্যত্বের সমস্যাও দূর করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, যাঁরা দীর্ঘ অসুস্থতার পর হরমোনের ভারসাম্য হারিয়েছেন বা মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই থেরাপি উপকারী হতে পারে। এটি শরীরে বল ও পেশিশক্তি ফিরিয়ে আনে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

টেস্টোস্টেরন হরমোন থেরাপি নিয়ে এ শহরেও চিন্তাভাবনা হচ্ছে। তার কিছু কারণও আছে। এ শহরেও বয়স্কদের মধ্যে বিয়ের প্রবণতা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সংবাদপত্র, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে বয়স্ক পাত্র-পাত্রীর ছড়াছড়ি। ফেসবুকে তৈরি হচ্ছে আলাদা কমিউনিটি। ভাবনা পরিণত হয়েছে, শহর পরিণত হচ্ছে, চারপাশের কটাক্ষকে দুয়ো দিয়ে একটু ভাল থাকার চেষ্টা হচ্ছে সে ঠিকই, তবে তাই বলে শরীর তো আর বদলাবে না। মনের বয়স ত্রিশে নামিয়ে আনলেও, শরীরের বয়স কমানোর জাদুকাঠি এখনও হাতে আসেনি। শরীর বুড়ো হোক ক্ষতি নেই, যৌবনের মতো শক্তিটুকু ধরে রাখতে আপত্তি কোথায়। ‘টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ সে অসাধ্য সাধনই করছে।

পৌরুষ ধরে রাখার চিকিৎসা,

মেয়েদের যেমন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন যৌনইচ্ছা, সন্তানধারণ থেকে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলায়, ছেলেদের তেমনই জিয়নকাঠি হল টেস্টোস্টেরন হরমোন। শুক্রাণু তৈরি, পুরুষালি শরীরের গঠন সবের পিছনেই কলকাঠি নাড়ে এই হরমোনটিই। পুরুষের শরীরে সেই হল হোমড়াচোমড়া হরমোন। নেতা গোছের এই হরমোনটি কমে গেলে, পুরুষের শক্তিই টালমাটাল হতে থাকে। শরীরের শক্তি যেমন কমে যায়, তেমনই প্রজননের পথটিও জটিল হয়ে ওঠে। বাবা হওয়ার ক্ষমতা আর তেমন ভাবে থাকে না। কিন্তু বললেই তো আর হরমোনটিকে ধরেবেঁধে রাখা যাবে না, বয়স হলে সে আপনা থেকেই কমতে থাকবে। আবার কোনও রকম শারীরিক সমস্যা হলে বা অস্ত্রোপচার হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে তখনও হরমোনটির ক্ষরণে গোলমাল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই টেস্টোস্টেরন হরমোনটিকে চাঙ্গা রাখতে পারলেই, পুরুষের যৌবন ষাটেও অক্ষুন্ন থাকবে। সে কাজটিই করবে ‘টেস্টোস্টের রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ (টিআরটি)।

সূচ ফুটিয়ে হোক, খাওয়ার ওষুধ দিয়ে অথবা জেল লাগিয়ে বা শরীরে প্যাচ সেঁটে দিয়ে, হরমোনটি শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়াই কাজ। তাতে সময়ও কম লাগবে এবং খরচও কম হবে। যদি ঠিকঠাক এই পদ্ধতি কাজ করে, তা হলে ষাটে পৌঁছেও যৌবনের মতো শক্তি পাওয়া যেতে পারে।

হরমোন থেরাপি কাদের জন্য?

টেস্টোস্টেরন হরমোন অনেক মহিলাও নেন। বিশেষ করে শরীরের শক্তি বাড়াতে অ্যাথলিটরা এমন হরমোনের থেরাপি করে থাকেন বলে জানালেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। তবে তার নির্ধারিত ডোজ় আছে। ডোপ পরীক্ষায় সময়ে প্রস্রাবে এই হরমোনটি কতটা আছে, সেটিই দেখা হয়। আসলে টেস্টোস্টেরন হরমোন থেরাপির মূল কাজই হল শক্তি বৃদ্ধি করা। হরমোনটি যদি সূচ ফুটিয়ে শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে পেশির শক্তি বাড়বে, অন্য হরমোনগুলিও দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করা শুরু করবে।

থেরাপিটি দু’রকম কাজের জন্য করা হয়— ১) বন্ধ্যত্বের সমস্যা থাকলে। অনেক সময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতাও বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে। চিকিৎসকের পরিভাষায় একে বলে ‘সেক্সুয়াল ডিসফাংশন’। এ ছাড়া থাকতে পারে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন, অর্থাৎ এতে পুরুষাঙ্গ দৃঢ় হওয়ার সমস্যা ও ইজ্যাকুলেশনের সমস্যাও থাকতে পারে।

২) একটু বেশি বয়সে পৌঁছে যদি কেউ যৌবনের মতো যৌনক্ষমতা ধরে রাখতে চান, সে ক্ষেত্রেও এই থেরাপিটি করা হয়ে থাকে।

যৌন ক্ষমতা বাড়ানোই এই থেরাপির একমাত্র লক্ষ্য, তা কিন্তু নয়। এর কাজ আরও অনেক। সংক্রমণ, হরমোন ও জিনগত সমস্যা, পরিবেশ ও জীবনশৈলীর কারণে পুরুষের বন্ধ্যত্ব দেখা যায়। মূলত মাম্পস বা ওই জাতীয় সংক্রামক জ্বরের ফলে যদি শুক্রাশয় ফুলে যায় সেখান থেকে শুক্রাণুর ক্ষতি হয়। এ ছাড়া, ডায়াবিটিস, ক্যানসার ইত্যাদি কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শুক্রাণু নষ্ট হতে থাকে। তখন এই থেরাপিটি ভরসার হাত হতে পারে।

অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই জন্মগতভাবে শুক্রাশয়ের গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাশয় ঠিকমতো তলপেট থেকে নেমে আসতে পারে না, অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থানে পৌঁছায় না। এই শারীরিক অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘আনডিসেন্ডেড টেস্টিকল’।

এই সমস্যাটি সময়মতো চিহ্নিত না হলে ভবিষ্যতে নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন, শুক্রাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, প্রজনন ক্ষমতায় ঘাটতি দেখা দেয় এবং বন্ধ্যত্বের সম্ভাবনাও থাকে। ফলে এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্টোস্টেরন থেরাপি বা প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।


You might also like!