দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ 'ফোড়ন কাটা', এই শব্দবন্ধ বাঙালিদের কাছে অতি পরিচিত । আড্ডার মাঝে হোক বা বা আলাপ-আলোচনায়, অনেকেই মাঝে মাঝে বলতে শোনা যায়, 'তুমি আর ফোড়ন কেট না' । কথার মাঝে কথা বললেই আপনাকে হয়তো এমন কথা শুনতে হয় আকছাড় । কিন্তু, এই একটা অর্থেই যে ফোড়ন বাঙলিদের কাছে সীমাবদ্ধ, তা বলা যায় না । মাঝে মাঝে ফোড়ন কাটাটাও প্রয়োজন, তবে সেটা কথায় নয়, রসনা তৃপ্তিতে । ফোড়ন ছাড়া যে রান্নার স্বাদ বাড়ে না ।
কোনও কাজের শুরুটা যদি ভাল হয়, তা হলে বাকিটাও ভালভাবে সম্পন্ন হয় । রান্নার ক্ষেত্রে ফোড়নের ব্যবহারও তেমনই । ফোড়নেই বাড়ে রান্না স্বাদ-গন্ধ । রান্নায় ঠিকঠাক ফোড়ন পড়লে স্বাদই বদলে যায় । কিছু কিছু রান্না তো আবার ফোড়ন ছাড়া সম্ভবই নয় । অনেকে আবার ফোড়ন-কে সম্বরও বলে থাকেন । আবার কোথাও বলা হয় তড়কা লাগানো । রান্না শুরুর আগে, তেলের উপর কালোজিরে, জিরে, পাঁচফোড়নের মতো গোটা মশলা দেওয়াকেই বলা হয় ফোড়ন । যদিও অবাঙালি রান্নায় ফোড়ন আলাদা । দক্ষিণ ভারতে কারিপাতা আর সরষেই বেশিরভাগ রান্নায় ব্যবহার করা হয়
অনেকের সদ্য বিয়ে হয়েছে, নতুন সংসার কিংবা রান্নায় সদ্য হাতেখড়ি হয়েছে যাঁদের, সে সংসারের জন্য হোক বা কর্মক্ষেত্রে একা থাকার প্রয়োজনে,তাঁরা হয়তো জানেন না রান্না ফোড়নের প্রকৃত ব্যবহার । কোন সবজিতে কী ফোড়ন বা কোন ফোড়ন দিলে ডালের স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, অনেকেই হয়তো জানেন না । তাঁদের জন্যই আজকের প্রতিবেদনে রইল ফোড়নের সাতসতেরো ।
পাঁচফোড়ন
ফোড়নের কথা বললে প্রথমেই আসে বাঙালিদের পাঁচফোড়ন । সাধারণত বাঙালি রান্নাতেই এই ফোড়নের ব্যবহার করা হয় । পাঁচফোড়ন মানে হল পাঁচটি গোটা মশলার মিশ্রণ । সেই পাঁচ গোটা মশলার মধ্যে রয়েছে মেথি, মৌরি, কালো জিরে, জিরে ও রাঁধুনি । পাঁচমিশালি কোনও সবজি রান্না করলে পাঁচফোড়ন মাস্ট । এছাড়া কুমড়োর ছক্কা, লাবড়ার মতো নিরামিষ তরকারিতেও থাকে পাঁচফোড়ন । আবার অনেকে ডালেও পাঁচফোড়ন ব্যবহার করেন । তেলে যদি পেঁয়াজ আর পাঁচফোড়ন দিয়ে ডাল রান্না করা হয়, তাহলে তাঁর স্বাদ-গন্ধই আলাদা হয়েছে ।
পাঁচফোড়নের এই পাঁচ মশলা শরীরের জন্যও বেশ ভাল । যেমন, ওজন বশে রাখতে জিরে-র জুরি মেলা ভার । আবার হজমের জন্য অনেকে জিরে-র জল খান । কোলেস্টরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে মৌরি । কালোজিরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
কোন রান্নায় কী ফোড়ন
জিরে
মুগ ডাল কিংবা নিরামিষ কোনও তরকারিতে জিরে ফোড়ন দেওয়া হয় । এছাড়া, মাছের কিংবা ডিমের ঝোলে জিরে ফোড়ন মাস্ট ।
কালো জিরে
কালোজিরে, কাঁচালঙ্কা দিয়ে পাতলা মুসুর ডাল আর গরম ভাত যেন স্বর্গ । আবার একই ফোড়নে অনেকে মাছের পাতলা ঝোল খেতে ভালবাসেন । এছাড়া, লুচির সঙ্গে সাদা আলুর চচ্চরিতেও কালো জিরে ফোড়ন স্বাদ বাড়িয়ে দেয় ।
রাঁধুনি
ডালে রাঁধুনি ফোড়ন দিতে পারেন । মুসুর ডালের সঙ্গী রাঁধুনি ফোড়ন আর কালো জিরে।
হিং
অড়হড় ডাল বা বিউলির ডাল রান্না করবেন ভাবছেন ? তাহলে জেনে নিন অড়হড় ডালে তেজপাতা ও জিরের সঙ্গে হিংফোড়ন দিলে ভাল লাগে । বিউলির ডালেও হিং ফোড়ন দেওয়া হয় ।
মৌরি
বিউলির ডালে মৌরি ফোড়ন দেওয়ার চল রয়েছে ।
সর্ষে
লাউ বা উচ্ছে দিয়ে ডাল বানাচ্ছেন ? তাহলে ফোড়নে সর্ষে মাস্ট । চাটনি-র ক্ষেত্রেও সর্ষে ফোড়ন দওয়া হয় অনেকসময় ।
গোটা গরমমশলা
মাংসে বা পোলাও অথবা বিরিয়ানিতে গোটা গরমমশলা ফোড়ন দেওয়া হয়
শুধু গটা মশলাই যে ফোড়নে ব্যবহার করা হয় তা নয়, ফোড়ন হিসেবে রান্নায় দেওয়া হয় আদা, রসুন, তেজপাতা, শুকনো লঙকা ।
ফোড়নের ব্যবহার
বেশ কয়েকটি ফোড়ন রয়েছে, যা বেশিক্ষণ ভাজতে নেই । যেমন ধনে জিরে, মৌরি ইত্যাদি । রান্নায় ফোড়ন দীর্ঘ সময় ধরে ভাজা যায় তবে পুড়ে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে পুরো রান্নাটাই মাটি হয়ে যাবে ।তাই, কথার মাঝে নয়, রান্নার মাঝে ফোড়ন কাটুন, তাতে রান্নার স্বাদও বাড়বে, আর মিলবে প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজনের বাহবা ।