দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : বর্ষার আগমনে বাড়ে সংক্রমণের আশঙ্কা, আর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন বাড়ির বয়স্ক সদস্যরা। কখনও ভাইরাল জ্বর, কখনও বা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা— এই মৌসুমে রোগের তালিকা যেন লম্বাই হয়। শিশু ও রোগপ্রতিরোধে দুর্বল ব্যক্তিদের পাশাপাশি, প্রবীণদের জন্য এই সময়টা হয়ে ওঠে আরও জটিল। জ্বর কমলেও দিন পাঁচেক ধরে হাত-পায়ের ব্যথা, চোখের ভিতরে চাপ আর শ্বাসকষ্ট ভোগায় অনেককেই। বৃষ্টির স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় পুরনো বাতের যন্ত্রণা বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে হঠাৎ হানা দেয় পেটের ইনফেকশন বা ‘স্টমাক ফ্লু’। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ তো রয়েইছে, তার সঙ্গে দূষিত জল ও খাবার থেকেও ছড়িয়ে পড়ে নানা সংক্রামক ব্যাধি। তাই এই সময় বাড়ির প্রবীণদের যত্নে রাখতে দরকার বাড়তি সতর্কতা ও যত্ন।
বয়স্কদের যে সমস্যাগুলি বেশি হয়-
ভাইরাল জ্বর ও পেটের রোগ এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর কারণ হল ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ। ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া, টাইফয়েড, ক্লসটিডিয়াম, সিরেলা, সালমোনেলার মতো ব্যাক্টেরিয়াদের উপদ্রব বাড়ে। এমনটাই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অংশুমান তালুকদার। তাই বাইরের খাবার, জল এই সময়ে না খাওয়াই ভাল।কোথাও যদি ঘুরতে যান, তা হলে সঙ্গে করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য আলাদা করে খাবার, ফোটানো জল নিয়ে যাবেন।
ইনফ্লুয়েঞ্জার পাশাপাশি অ্যাডিনোভাইরাস, রেসপিরেটারি সিনসেশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)-এর দাপট বাড়ছে। যে কারণেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি হচ্ছে। জ্বর ১০০-র আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে। কারও ঘুরেফিরে জ্বর আসছে। অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমালও হচ্ছে অনেকের। জ্বর যদি তিন দিনের বেশি থাকে, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথার মতো লক্ষণ থাকলে কিছু রক্তপরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল।
বাতের ব্য়থাও খুব ভোগায় এই সময়ে। যদি আর্থ্রাইটিস থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শেই থাকতে হবে। আর যদি হাঁটু বা কোমরের ব্যথা ভোগায়, তা হলে হালকা হাঁটাহাঁটি, যোগাসন, কয়েক রকম স্ট্রেচিং করা যেতে পারে।
সর্দিকাশির অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনো ভাইরাস কিন্তু করোনার চেয়েও বেশি ছোঁয়াচে, এমনই বলছেন চিকিৎসক। গুরুতর ভাবে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে গলা ও ঘাড়ের চারদিকের গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে।রাইনোভাইরাস নাক দিয়ে ঢোকে। এর সংক্রমণ হলে গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে না পারা, শুকনো কাশি ভোগাতে পারে। এই অবস্থায় নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।
সাবধানে থাকার কিছু উপায়-
১)সর্দিকাশি হলে মুখে মাস্ক পরে তবেই বাইরে যান।
২) বয়স্কদের এই সময়ে ফোটানো জলই খাওয়াতে পারেন। রাস্তায় বিক্রি হওয়া শরবত, লস্যি বা নরম পানীয় বয়স্কদের দেবেন না।
৩) খাওয়ার আগে অবশ্যই ভাল করে হাত ধুতে হবে। প্রতি বার শৌচাগারে যাওয়ার পর হাত স্যানিটাইজ় করতে হবে। ভিজে জামাকাপড় পরে বেশি ক্ষণ থাকবেন না। বাড়ির প্রবীণ সদস্য যে ঘরে থাকেন, সেই ঘরটি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৩) ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব থাকলেও এ সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। ফলে খাবার বেশি ক্ষণ ভাল থাকছে না। তাই এই মরসুমে বাসি খাবার না খাওয়াই ভাল। সব সময় চেষ্টা করুন টাটকা খাবার খাওয়ার। খাওয়ার আগে খাবার গরম করে নিন। ঠান্ডা খাবারে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধার আশঙ্কা বেশি।
৪) বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেবেন না। নর্দমা পরিষ্কার রাখুন। মশার ডিম পাড়ার সম্ভাব্য জায়গাগুলি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রাতে মশারি ব্যবহার করাই ভাল। মশা ছাড়াও নানা রকম পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে এই সময়ে।
৫) গ্রীষ্মের অস্বস্তির পর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজতে অনেকেরই ভাল লাগে। কিন্তু তাই বলে সব সময়ে নয়। বিশেষ করে ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে বৃষ্টির জল গায়ে পড়লেই জ্বরে ভুগতে হতে পারে। সঙ্গে বর্ষার জল থেকে ত্বকের নানা রকম সমস্যা তো রয়েছেই। তাই বাইরে বেরোনোর সময় অবশ্যই ছাতা সঙ্গে রাখুন।
৬) বর্ষায় জলরোধী জুতো ব্যবহার করুন, যা পিছলে যাওয়া এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। ভেজা জায়গায় খালি পায়ে হাঁটবেন না। বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই পা ভাল করে ধুতে হবে। বর্ষার জমা জলে নানা রকম রোগজীবাণু জন্মায়। তা থেকে সংক্রমণজনিত অসুখ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।