kolkata

1 day ago

Tathagata Roy: “হেলে পড়া ফ্ল্যাট, কফ সিরাপের বাঙ্কার এবং….”, ওড়িশার সঙ্গে তুলনা করে তথাগতের তোপ পশ্চিমবঙ্গকে

Tathagata Roy
Tathagata Roy

 

কলকাতা, ২৮ জানুয়ারি : ওডিশার সঙ্গে তুলনা করে প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এবং শিল্প-পরিস্থিতিকে। মঙ্গলবার তথাগতবাবু এক্সবার্তায় লিখেছেন, “ফেসবুক খুললেই এখন হেলে পড়া সব ফ্ল্যাট নিয়ে নানা রকম মিম। সীমান্তে বাঙ্কারের হদিস ! কাশির সিরাপ চোরাচালানের জন্য কী ভীষণ অভিনব ভাবনা ! সেখানেই ঘুর ঘুর করতে গিয়ে ধৃত দুই রোহিঙ্গা ! বাঙালির এখন চর্চার বিষয়ের অভাব নেই। কী সব রসঘন বিষয় বলুন তো ! এসব ছেড়ে বাকি কোথায় কী হচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়?”

বঙ্গ দেশ যখন বাঙ্কারে মজে, ঠিক তখন পড়শি রাজ্য ওড়িশায় সাজ সাজ রব। দু’ দিন রাজধানী ভুবনেশ্বরে শিল্প সম্মেলন। উৎকর্ষ ওড়িশার উদ্বোধন করতে ভুবনেশ্বর এসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। আসছেন বিশ্বের ২০ টি দেশের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি। আসছেন দেশের প্রথম সারির প্রায় সব শিল্পপতি। আপনি বলবেন, ধুর এ আর নতুন কী ? সে তো বিশ্ব বাংলাতেও সবাই আসেন। হাসেন। মাথা নাড়েন। আবার আসেন। আবার হাসেন। উঁহু। ওড়িশার কেস আলাদা। ওড়িশার বিখ্যাত ছানাপোড়া খেয়ে, কটকি শাড়ি কিনে যে যাঁর ব্যক্তিগত বিমানে ফিরে যাওয়ার জন্য শিল্পপতিরা কেউ আসছেন না। সবাই আসছেন পকেটে নির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে।

হিসেব কষছেন মোহন চরণ মাঝি। পড়শি রাজ্যের আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী। হিসেব বলছে, সব মিলিয়ে ১০০ মউ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা। সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ কর্ম সংস্থান প্রায় ৩ লক্ষ। আপনি বলবেন, ছাড়ুন তো, আমাদের বিশ্ব বাংলাতেও “ইন্ডাস্টি পিপুলরা” চলে যাওয়ার পর প্রতিবার আমরাও তো ১০/১৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের গল্প শুনি ! আচ্ছা শুনুন না। শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ুন। বলেছি তো, ওড়িশার কেস আলাদা, দাদা !

যে শিল্পপতিরা আসছেন, তাঁদের অন্যতম, জেএসডব্লিউ স্টিলের কর্ণধার, সজ্জন জিন্দাল। মনে আছে ? ২ নভেম্বর। ২০০৮। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমিতে বছরে ১ কোটি মেট্রিক টনের সুসংহত ইস্পাত কারখানার শিলান্যাসের দিন। মনে আছে ? অনুষ্ঠান শেষে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের কনভয়ে মাওবাদী হামলা। মনে আছে ? ইস্পাত কারখানাটা হলই না আর কোনও দিন। জিন্দলরা অবশ্য নমো নমো করে একটা সিমেন্ট কারখানা করেছে। কিন্ত প্রায় ৪ হাজার একর জমি আজও পড়ে। রাজ্যের শিল্প মানচিত্রের ছেঁড়া ক্যানভাসের মতো। সেই জিন্দলরাই ওড়িশায় ইস্পাত কারখানা গড়ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পসকোকে মনে আছে ? নবীন পটনায়কের আমলে, ওড়িশার জগৎসিংহপুর জেলায় ইস্পাত কারখানা গড়বে বলে, ২০০৫ সালে চুক্তি করেছিল পসকো। কিন্তু জমি আন্দোলনের জেরে প্রকল্প প্রস্তাব বাতিল করে, ২০১৭ সালে ওড়িশা ছাড়ে পসকো। সেই পসকোকেই ফেরাচ্ছে জিন্দল। ওড়িশার পিছিয়ে পড়া জেলা, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের জেলা কেওনঝড়ে প্রাথমিকভাবে ৫০ লক্ষ মেট্রিক টনের ইস্পাত প্রকল্প গড়তে যৌথ বিনিয়োগ করছে জেএসডব্লিউ এবং পসকো। প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। দুপক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়ে গেছে। ওড়িশা সরকারের সঙ্গে মউ সই। আচ্ছা, ১৯৯৮ সালে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে সেই বিখ্যাত বিয়ে মনে আছে ? ইস্পাত সম্রাট লক্ষ্মী মিত্তলের ছেলে আদিত্য মিত্তলের বিয়ে। মনে আছে ? তো মিত্তল সাহেবও কিন্তু বিশ্ব বাংলায়, বিজিবিএস, মানে কিনা বেঙ্গল গ্লোবাল বিসনেস সামিটে এসেছেন কয়েকবার। কিন্তু, “সিন্ডিকেট-বান্ধব” বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগের ভাবনা সম্ভবত মিত্তল সাহেবের মাথায় কখনও আসেনি। সেই মিত্তল সাহেবই থাকছেন উৎকর্ষ ওড়িশায়। না, কোনার্ক সূর্য মন্দির চত্বরে ছেলের বিবাহ বার্ষিকী পালনের প্রস্তাব নিয়ে নয়। মিত্তল সাহেব ভুবনেশ্বরে আসছেন জাপানি ইস্পাত সংস্থা নিপ্পন স্টিলের হাত ধরে। গুজরাতের সুরাতের খুব কাছেই আরব সাগরের তীরে মিত্তলদের আর্সেলর আর নিপ্পন স্টিলের যৌথ উদ্যোগে রমরমিয়ে চলছে ৯০ লক্ষ মেট্রিক টনের ইস্পাত কারখানা।

আর্সেলর মিত্তল এবং নিপ্পন স্টিল এবার ওড়িশার উপকূল জেলা, কেন্দ্রপাড়ায় বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা গড়তে চায়। ধাপে ধাপে বিনিয়োগ প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংগ্যাং এ পসকোর ২ কোটি ৩০ লক্ষ মেট্রিক টনের বিশ্বের বৃহত্তম ইস্পাত কারখানাকেও ছাপিয়ে যাবে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া। কারণ মিত্তল নিপ্পন যৌথ উদ্যোগে ২ কোটি ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন ইস্পাত কারখানা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

এই দুই ইস্পাত প্রকল্প ওড়িশার শিল্প মানচিত্রের চেহারাই বদলে দিতে পারে। মানে, ওড়িশায় আরও দুই রৌরকেলা বা জামশেদপুর তৈরির সম্ভাবনা। ঠিক এই কারণেই ভুবনেশ্বর ছুটে গিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। দিল্লিতে বসে টের পাচ্ছি, ভারত সরকারের পূবে তাকাও নীতিতে ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে ওড়িশা আর অসম। প্রস্তাবিত ভরকেন্দ্র, বিশ্ব বাংলা থেকে সরছে। সরে যাচ্ছে দ্রুত।….”

অপর একটি এক্সবার্তায় তথাগতবাবু লিখেছেন, “এর পরের বার যখন পুরী যাবেন, সমুদ্রের তীরে “উড়ে” চাওয়ালা দেখে ধাই কিরি কিরি, ধাই কিরি কিরি বলে খিল্লি করার আগে দুবার ভাববেন। মনে রাখবেন, জিন্দল আর মিত্তলদের ইস্পাত কারখানার গেটের বাইরে হয়ত চপ বেচতে যাবে আপনারই কোনও স্বজন। কোনও এক হতভাগা বাঙালি। কোনও এক দিন…”।

You might also like!