দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আবারও ছাত্রীর রহস্য়মৃত্য়ু। ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের পাশের ঝিল থেকে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতেই সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় অনামিকাকে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, শেষরক্ষা হয়নি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার ড্রামা ক্লাব আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল পার্কিং লটে। সেই অনুষ্ঠান দেখতেই এসেছিলেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। জানা গিয়েছে, তাঁর বাড়ি নিমতায়। গতকাল রাত ৯টা ৫৫ মিনিট নাগাদ শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য ওঠেন ওই ছাত্রী। এরপরই পার্কিং লটের উল্টো দিকে থাকা গভীর ঝিলে পড়ে যান কোনওভাবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ছাত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, রাতে বন্ধুদের সঙ্গে ঝিলপাড়ে বসেছিলেন ওই ছাত্রী। তারপরে কীভাবে ঘটল এমন ঘটনা?উঠছে প্রশ্ন! শুক্রবার কাঁটাপুকুর মর্গে ময়নাতদন্ত হবে ছাত্রীর দেহের। ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার ইনকোয়েস্ট করা হবে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মামলা রুজু হবে।
এই ঘটনার পরই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই মদের আসর বসেছিল। ঘটনাস্থলের কাছ থেকে একটি মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। ওই ছাত্রীও মদ্যপ ছিলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ময়নাতদন্তের পরই সে বিষয়ে জানা যাবে। তবে কেন শৌচালয়ের বদলে ওই ঝিলের দিকে গেলেন ছাত্রী, তাঁর সঙ্গে কেউ ছিলেন কি না, এই ধরনের নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। রাত ১০ টার পরও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউল গানের অনুষ্ঠান চলছিল, সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। জানা গিয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় লাইটগুলি অফ রাখা হয়েছিল। রাত ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ যখন ছাত্রীকে ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই প্রশ্নও উঠছে যে একেবারে নিরাপত্তারক্ষীদের ঘরের পাশেই এই ঘটনা ঘটেছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরদারি কোথায়? সিসিটিভি বসানো থাকলেও, তা বাইরের দিকে মুখ করা। গোটা ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বসানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। পড়ুয়াদের চাপের কাছেই কি নতিস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ? পুকুর থেকে ওই ছাত্রীকে যাঁরা উদ্ধার করেছিল, তাঁদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। কী অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছিল, উদ্ধারের সময় জীবিত ছিল কি না, তাঁকে ঝিলে পড়ে যেতে কেউ দেখেছিল কি না, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও দোলের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের জলডুবিতে মৃত্যু হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাত নামলেই ক্যাম্পাসে মদের আসর বসার অভিযোগ রয়েছে, এমনকি মাঝে মধ্যেই নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর হানা হয়। এবারের ঘটনাও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তার অভাবকেই ফের একবার কাঠগড়ায় তুলেছে।