দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পোক্ত করতে একটা সময়ে চিন প্রায়ই প্যান্ডা গিফ্ট করত ইউরোপ, আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশকে। পরে অবশ্য ট্যাকটিক্স পাল্টে ১৯৮৪ থেকে উপহার দেওয়া বন্ধ করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে প্যান্ডা ‘ভাড়া’ দেওয়া শুরু করে বেজিং। একটা সময়ে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। ধাপে ধাপে সেটাই আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা বেজিং। প্রয়োজনে প্যান্ডা ‘গিফ্ট’ করতেও রাজি তারা। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, আমেরিকার সঙ্গেও এই ‘প্যান্ডা ডিপ্লোম্যাসি’ দিয়েই সম্পর্কের মেরামতি চাইছে চিন। মে মাসে ক্যালিফর্নিয়ায় গিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট নিজে গিয়ে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। তারপরেই বেজিং ইঙ্গিত দেয়— আমেরিকায় আরও প্যান্ডা পাঠাতে আগ্রহী তারা।
গত ১৫ জুন চার দিনের অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন চিনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। সেটা যে নেহাত প্রমোদ-সফর নয়, তা স্পষ্ট হয়ে যায় বেজিংয়ের বিবৃতিতেই। রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে মিস্টার কিয়াং জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অস্ট্রেলিয়া এক জোড়া জায়েন্ট প্যান্ডা পাঠাবেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়া বরাবরই চিনের অন্যতম প্রধান ট্রেডিং পার্টনার। কিন্তু আর পাঁচটা দেশের মতো করোনার উৎস নিয়ে চিনের উহান ল্যাবের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেই চিনের সঙ্গে বিবাদে জড়ায় অস্ট্রেলিয়া। ২০২০-র শেষে এমনকী সে দেশ থেকে খনিজ পদার্থ এবং কৃষিপণ্য আমদানিও বন্ধ করে দেয় চিন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০২২-এ লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দু’দেশের মধ্যে একটু একটু করে বরফ গলতে শুরু করেছিল। বাকিটা প্যান্ডা-ই গলাবে— মনে করছে বেজিং।
নতুন কিছু নয়। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৯-এ দেশ গঠনের সময় থেকেই নিজেদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে ‘প্যান্ডা ডিপ্লোম্যাসি’ শুরু করে দেয় মাও জে দং-এর চিন। প্যান্ডা মানেই একটা সময়ে ছিল চিনের ‘গুডউইল অ্যানিম্যাল অ্যাম্বাসাডর’। বেজিং প্যান্ডা পাঠাচ্ছে মানেই ধরে নেওয়া ভালো যে, চিন কোনও ভাবেই সে দেশকে চটাতে চায় না। যেমন— ‘পিংপিং’। ১৯৫৭-য় ওই প্যান্ডাকে মাও নিজে উদ্যোগ নিয়ে তুলে দিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে। তার পরেও আবার।
সুসম্পর্কের খাতিরে ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০-র মধ্যে উত্তর কোরিয়াকেও পাঁচটা প্যান্ডা গিফ্ট করেছিল চিন। এমনকী, তিক্ততা কাটিয়ে উঠতে ১৯৭২-এ ‘লিংলিং’ ও ‘সিংসিং’ নামের জোড়া জায়েন্ট প্যান্ডা ওয়াশিংটনকে গিফ্ট করেছিল বেজিং। সেই তালিকায় নাম জোড়ে জাপান, ফ্রান্স, ব্রিটেন, স্পেনেরও। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০১৩-র এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর বিনিময়ে ইউরেনিয়াম ডিল সাইন করেছে বেজিং। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে যেমন চিনের প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল— মুক্ত বাণিজ্য।
তবে চিনের এই ‘প্যান্ডা ডিপ্লোম্যাসি’ শুধুই ‘কিউট’ নয়। কোনও দেশের উপর চটে গিয়ে চিন প্যান্ডা ফেরত দিতে বলেছে— এমন উদাহরণও বিস্তর। গত বছর এপ্রিলে যেমন ২০ বছর লিজ়ে রাখা প্যান্ডাও বেজিংকে ফেরাতে বাধ্য হয়েছিল ওয়াশিংটন! ২০১০-এ আবার দলাই লামার সঙ্গে বারাক ওবামার মিটিংয়ে খেপে গিয়ে একসঙ্গে জোড়া প্যান্ডা ফিরিয়ে নিয়েছিল চিন।