International

1 week ago

Usa Research: দেরি করে ঘুমে ভোগান্তি ছোটোদের! দাবি ইউএস স্টাডিতে

Children suffering from late sleep! Claims in the US study
Children suffering from late sleep! Claims in the US study

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ শহরাঞ্চলে ছোট হয়ে যাচ্ছে রাত। কিভাবে? আসলে শহরাঞ্চলে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও বাবা-মায়ের মতোই কিছুটা দেরিতে ঘুমের দেশে পারি দেয়। যার ফলে ছন্দপতন ঘটে শরীরের জৈবশক্তিতে। তাতে কি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছোটদের পড়াশোনার মান?

ইউএসএ-র সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, হ্যাঁ, অনেকটাই ক্ষতি হয়। এমনকী, রাত জেগে পড়েও খুব লাভ হয় না বলে দেখা গিয়েছে প্রায় ৮০০ কিশোর-কিশোরীকে স্টাডি করে। বিখ্যাত ‘স্লিপ’ জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দাবি, দেরি করে বিছানায় যাওয়া কিশোর-কিশোরীদের ক্লাসের রেজাল্ট অধিকাংশ সময়েই অপেক্ষাকৃত খারাপ হচ্ছে, ঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া সমবয়সিদের চেয়ে। স্বভাবতই চিন্তিত চিকিৎসকরা।

কেননা, রাত ১০টায় শুয়ে পড়ার কোনও নজিরই আজকাল শহুরে জীবনে দেখা যায় না কোনও পরিবারে। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁদের ছেলে-মেয়েরাও ১১টা-১২টা পর্যন্ত জেগে থাকে। আবার সকালে স্কুলে যাওয়ার তাড়ায় উঠতেও হয় ভোরে। ফলে ঘণ্টা সাতেকের পর্যাপ্ত ঘুমটাই হয় না ছুটির দিন ছাড়া। ঘুম বিশেষজ্ঞ তথা ইএনটি সার্জেন দীপঙ্কর দত্তের কথায়, ‘ঘুম কম বা অনিয়মিত হলে শরীরের হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা আখেরে কেড়ে নেয় মনঃসংযোগের ক্ষমতা। ফলে রেজাল্ট খারাপ তো হবেই।’

নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির ফ্যামিলি পপুলেশন অ্যান্ড প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিভাগের গবেষকরা পাঁচ হাজার কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে চলা একটি বৃহত্তর সমীক্ষার মধ্যে থেকে ৭৮২ জনের ঘুমের অভ্যাস ও স্কুলের রেজাল্ট নিয়ে স্টাডিটি করেন। তাতে দেখা যায়, যারা রাত ৯টা বা ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ছে, তাদের অধিকাংশেরই রেজাল্ট ঘোরাফেরা করছে এ কিংবা বি গ্রেডের মধ্যে। তবে যাদের ১২টা বা তার পরে ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে, তাদের অধিকাংশেরই আবার রেটিং ঘোরাফেরা করছে সি বা ডি গ্রেডের মধ্যে।

মুখ্য গবেষক জিনা মারি ম্যাথিউ জানিয়েছেন, এমন নয় যে দেরিতে ঘুমিয়ে কেউ ভালো রেজাল্ট করেনি কিংবা সময়ে ঘুমিয়ে কেউ খারাপ রেজাল্ট করেনি। তবে সাধারণ ভাবে দেখা গিয়েছে, যারা সময়ে ঘুমোয়, তাদের রেজাল্টই তুলনায় ভালো। ঘুম তথা ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ হালদার মনে করেন, সেটাই স্বাভাবিক।

তাঁর কথায়, ‘ঘুমের সময় ও গুণমান ভালো হলে তা ভালো মনোনিবেশ ও স্মৃতিশক্তির সহায়ক হয়। ফলে পড়াশোনায় ভালো ফলের জন্য জৈবঘড়ির চরিত্র মেনে ভদ্রস্থ সময়ে ঘুমিয়ে পড়াই ভালো। এতে সার্বিক ভাবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যার সুপ্রভাব শুধুমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রেই নয়, নানা শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের মধ্যেও দেখা যায়।’

কিন্তু চিকিৎসকদের আক্ষেপ, শহুরে জীবনযাত্রায় ঘুমের পরিমাণ কমে গিয়েছে বয়স নির্বিশেষে। এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁদের সন্তানরাও

দেরিতে ঘুমোতে যাওয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। যা আখেরে পরবর্তী প্রজন্মের মারাত্মক ক্ষতি করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্লিপ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ দাস বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা যে কোনও কিছুর জন্যই ঘুমের সঙ্গে সমঝোতা করি। তবে ভালো ঘুমের জন্য কোনও কিছুর সঙ্গে সমঝোতা করি না। ব্যক্তিজীবনে ঘুমকে একেবারেই প্রাধান্য দেওয়া হয় না। ফলে সন্তান ঠিক সময়ে ঘুমোক, বেশিক্ষণ ঘুমোক, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সচেতন নই। এর প্রভাব যে পড়াশোনায় পড়ে, তা নিয়েও সচেতনতা নেই।’

এর ফলে একটা গোটা প্রজন্মের সার্বিক জীবনশৈলীতে বিপর্যয় ঘটে যাচ্ছে বলে মনে করেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা। কেননা, জৈবঘড়ির ছন্দ বা সারকার্ডিয়ান রিদম, স্লিপ-ওয়েক চক্র বিঘ্নিত হলে তার অবধারিক প্রভাব পড়ে শারীরিক ভাবেও। এবং বয়ঃসন্ধির স্বাভাবিক বৃদ্ধিও তাতে ব্যাহত হয়। ফলে পড়াশোনায় প্রভাব তো পড়বেই। এবং এই বিশ্বায়নের যুগে এহেন প্রবণতা আর শুধু ইউরোপ-আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মোবাইল-ট্যাব ঘাঁটার অভ্যাস যে রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে, শুতে যাওয়ার সময়ে পিছিয়ে যাচ্ছে, তা আর শুধু পশ্চিমী দুনিয়ার সমস্যা নয়, এর প্রভাব পড়েছে সব জায়গাতেই।

ফলে, স্টাডিটি ইউএসএ-তে হলেও, একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে বঙ্গেও। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানাচ্ছেন, মোবাইলের নেশায় বুঁদ তাঁদের অনেক ছাত্রছাত্রীর চোখেও যে ঘুম কমে গিয়েছে, তা রোজ চাক্ষুষ করছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘কোন পড়ুয়ার কম ঘুম হয়েছে বা হচ্ছে, তা তাদের পড়াশোনার পারফরম্যান্সেই আমরা বিলক্ষণ বুঝতে পারি ক্লাসে কিংবা ল্যাবে। তাই ঘুমের বিষয়টি নিয়ে আমরা নিয়মিত পড়ুয়া ও অভিভাবকদেরও সচেতন করার চেষ্টা করি।’

You might also like!