জীবনভর একেরপর এক অট্টালিকা তৈরি করে গেলেও নিজের ও নিজের পরিবারের জন্য একখানা ঘরও তৈরি করে উঠতে পারেন নি গোবিন্দ মাইতি। তবে তাঁর এই কঠিন লড়াইতে তিনি সবসসময়ই পাশে পেয়েছেন তাঁর স্ত্রীকে। ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর খরচ মেটাতে বিড়ি বাঁধেন তাঁর স্ত্রী নীলিমা মাইতি। আবাস যোজনার বাড়ি না মেলায় এই দরিদ্র পরিবার থাকেন শতচ্ছিন্ন ত্রিপল ঘেরা বাড়িতে। তাদেরই একমাত্র ছেলে সুদীপ এবার ডিআরডিও-তে।
চক দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রামের স্কুলেই সুদীপের হাতেখড়ি। তবে ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। বিজ্ঞান বিভাগে পূর্ব চিলকা লালচাঁদ হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশের পর শিয়ালদার পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা। এরপর কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বি-টেক। বর্তমানে আইআইটি গুয়াহাটিতে এম-টেক পাঠরত। লক্ষ্য ছিল একটাই, দেশের সুরক্ষাকে আরও মজবুত করতে ডিআরডিও-তে যোগদান করা। অবশেষে মিলল সেই সুযোগ। ত্রিপল ঘেরা পাঁশকুড়ার এই হত দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি চলতি বছরের শুরুতেই ডিআরডিও দেরাদুন থেকে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের জন্য ডাক পান। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই খুশির হওয়া আত্মীয় পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে।
সুদীপ বলেন, 'গত বছর আচমকা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোমর ভেঙে যাওয়ায় বাবা আর কাজ করতে পারেন না। সংসার চালাতে মা এখনও বিড়ি বাঁধেন। মাথার উপর ছাদটুকুও নেই। তবুও স্বপ্ন ছিল দেশের সুরক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। আর সেই লক্ষ্যে এখন অনেকটাই সফল হতে পেরে খুশি।' এদিকে সুদীপের এই কঠিন লড়াইয়ে বেশ খানিকটা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আগেই এগিয়ে এসেছেন চিলকা লালচাঁদ হাই স্কুলের শিক্ষক শান্তনু চক্রবর্তী-সহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
মা নীলিমা মাইতি বলেন, 'অভাবের সংসারে পড়াশোনার এই বিপুল খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম হতে হয়েছে। তবুও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চাই ছেলের ইচ্ছে পূরণ হোক।' তবে রাজ্য সরকার উচ্চশিক্ষার জন্য পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে ও তাঁদের আর্থিক সাহায্য করতে যখন বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, সেই সময় সুদীপের মতো দরিদ্র ছাত্র সেইভাবে কোনও সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্নমহল থেকে।