দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ সাধারণভাবে আমরা হিমালয়ের দরজা বা দুয়ার বলে পরিচিত ডুয়ার্স সম্পর্কে কম-বেশি সবাই জানি। কিন্তু এটা হয়তো অনেকেই জানিনা যে ডুয়ার্স বেড়ানোর আদর্শ সময় এপ্রিল ও মে মাস। বর্ষার সময় জুন মাস থেকে তিন মাসের জন্য জঙ্গল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার আগেই ঘুরতে হবে। আর গরমের সময় জীব-জন্তুরা বাইরে খোলা এলাকায় বেশি ঘোরে। ফলে তাদের দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে জলার ধারে বা নদীরে পারে জল খেতে আসার সময়টাই সেরা। ডুয়ার্সের অনেক জঙ্গল মানুষকে টানে। তবে আমাদের পরামর্শ বেশি জঙ্গলে না ঘুরে ২/৩ টে জঙ্গল ঘোরার জন্য টার্গেট করুন। তাতে মন খুলে সবটা ঘুরতে পারবেন। তাই আজ ৩টে জঙ্গলের ছবি তুলে ধরছি।
১) গরুমারা জাতীয় উদ্যান -
নামটা 'গরুমারা' হলেও এই জঙ্গল বিখ্যাত অন্য কারণে।
ভারতের নিজস্ব একশৃঙ্গ গন্ডারের বংশবৃদ্ধির জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৪৯ সালে। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি পরিপূর্ণ জাতীয় উদ্যানে পরিণত হয়। ৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে বেড়ে হয় ৮০ বর্গকিলোমিটার। দেশের অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের তুলনায় আকারে মোটেই কম নয়। মাঝারি আকৃতির হলেও গরুমারা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। কত রকম অজানা প্রাণী এবং উদ্ভিদের দেখা মেলে। প্রায় ৫০ রকম প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৯০-র বেশি প্রজাতির পাখি, ২০-র বেশি প্রজাতির সরীসৃপ, ৭ ধরনের কচ্ছপ
২৫ রকমেরও বেশি প্রজাতির মাছ এবং আরও নানা জন্তু-জানোয়ার। কখনও কখনও বাঘ অর্থাৎ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারও চলে আসে। নানা বিরল প্রজাতির জীবজন্তু গরুমারাকে করে তুলেছে অনন্য। লুপ্তপ্রায় হয়ে আসা পিগমি হগ এবং হিসপিড খরগোশ এখানে থাকে। কত বিচিত্র পাখি, যেমন সিঁদুরে সহেলি, মৌটুসি, শাহ বুলবুল, কেশরাজ, ভারতীয় ধনেশ, কাঠঠোকরা, মথুরা।
২) বক্সা জঙ্গল ও ফোর্ট -
ব্রিটিশদের(প্রথমে ভুটানিদের) তৈরি বক্সা দুর্গ ও জেলা খান আজ ধ্বংস্তূপ। তবুও বক্সা জঙ্গলের আকর্ষণ অন্য কারণে। বক্সার ইতিহাস আর মিথকে গায়ে মেখে অরণ্যে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে একটা আদিম অথচ সজীব ভাব রয়েছে। জয়ন্তী ছাড়িয়ে গাড়ি সান্তালাবাড়ি। সেখান থেকে গাইড নিতে হয়। এখান প্রচুর থাকার জায়গা আছে। সেখানে ঢুকে তারপর গাইড এর সাথে ঘুরে বেড়ান জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পাহাড়ের পথে। বক্সায় যেতে যেতে চা-কফি মোমোর প্রচুর ছোট দোকান রয়েছে। জিরিয়ে নেওয়া যায়। বক্সা দুর্গ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বক্সা দুর্গ প্রধানত তৈরি করেছিল ভুটানিরা। ডুয়ার্সে আক্রমণ চালানোর জন্য। ১৭৭৩ সালে এই দুর্গটি ব্রিটিশদের চোখে পড়ে এবং ১৮৬৫ সালে দ্বিতীয় ভুটান যুদ্ধের শেষে এই দুর্গ পাকাপাকিভাবে ইংরেজরা করায়ত্ব করে নেয়। দুর্গটি প্রথমে বাঁশের তৈরি ছিল। পরে ইংরেজরা পাথরের বানায়। এটিকে জেলখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা আন্দামানের সেলুলার জেলের থেকেও ভয়ঙ্কর বলে কথিত আছে।।
৩) জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান -
সমুদ্রপৃষ্ঠ ৬১ মিটার উচ্চতায় তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের সামগ্রিক আয়তন ১৪১ বর্গ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার অন্তর্গত জলদাপাড়া মূলত নদীকেন্দ্রিক বনাঞ্চলময় একটি সুবিস্তৃত তৃণভূমি। সেখানকার বৈচিত্রময় প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে জলদাপাড়া একটি অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়েছিল। ২০১২ সালের ১০ মে এই বনভূমিকে জাতীয় উদ্যান বলে ঘোষণা করা হয়।জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের মুখ্য আকর্ষণ একশৃঙ্গ গণ্ডার। জলদাপাড়া টুরিস্ট লজ বা হলং বনবাংলোতে থাকার সুযোগ পেলে বাংলোয় বসেই দেখতে পাওয়া যাবে গণ্ডারের গতিবিধি।
যাওয়া - শিলিগুড়িতে বাসে, ট্রেনে কিংবা বিমানে নেমে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন। ট্রেনে অবশ্য কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে শিয়ালদা থেকে উঠলে গরুমারা, লাটাগুড়ি যাওয়ার জন্য মালবাজার স্টেশনে, জলদাপাড়া যাওয়ার জন্য মাদারিহাট স্টেশনে নামতে পারেন। অনেকে আলিপুরদুয়ারে নেমে ডুয়ার্স ঘোরেন। আবার অনেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে কোচবিহারে নেমে চিলাপাতা ভ্রমণ করতে পারেন। তবে শিলিগুড়ি থেকে একবারে গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করা সবচেয়ে ভাল।
থাকা - কমদামে বা বেশি দামের অজস্র হোটেল আছে। খরচ খুব বেশি নয়।