দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: আসন্ন বিধানসভা ভোটের আর কয়েক মাস বাকি। তবে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে এখন থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ছে তরতরিয়ে। এমন পরিস্থিতিতেই শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরের মূল কেন্দ্র দুর্গাপুর। সেখানে নেহরু স্টেডিয়ামে একদিকে রাজ্যের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস, অন্যদিকে বিজেপির বৃহৎ জনসভা— দুই মঞ্চে একযোগে হাজির থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির সফর ঘিরে রীতিমতো সাজো সাজো রব দুর্গাপুর জুড়ে, চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তুতি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দুর্গাপুরে তৎপরতা বেড়েছে বহুগুণে। শহরের অলিগলিতে দেখা গেল বিজেপি নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস। পথচারী থেকে শুরু করে দোকানদার— সকলের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে মোদির সভা সংক্রান্ত হ্যান্ডবিল। জনমত তৈরি করতে চেষ্টার খামতি রাখছেন না গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা। শহরে সর্বত্র মোদির ছবিযুক্ত ব্যানার, ফেস্টুনে ভরে উঠেছে রাস্তার ধারে খুঁটি, দেওয়াল। নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে দুর্গাপুরের সভাস্থল পর্যন্ত গোটা রাস্তায় পুলিশের ট্রায়াল রান চলছে। নেহরু স্টেডিয়ামে দফায় দফায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে বম্ব স্কোয়াড ও স্নিফার ডগ নিয়ে। সভাস্থলের প্রতিটি কোণায় নজরদারির জন্য লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। উপস্থিত রয়েছেন বিজেপির একাধিক শীর্ষনেতা, সৌমিত্র খাঁ, লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। শুক্রবারের সভার অন্যতম প্রধান দিক হল কেন্দ্রীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ও শিলান্যাস। জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ওই দিন প্রায় ৫,৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা করবেন। এর মধ্যে রয়েছে আসানসোল থেকে কলকাতা পর্যন্ত গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের (GAIL) পাইপলাইন প্রকল্প, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের মতো একাধিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। সেই অনুষ্ঠান সেরে তিনি পাশের মঞ্চেই ভাষণ দেবেন বিশাল জনসভায়। আজ, বৃহস্পতিবার দিনভর প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি নিয়ে দুর্গাপুরে সভাস্থল পরিদর্শন-সহ কর্মী ও নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
এদিন লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্গাপুরে আসছেন এটাই মানুষের কাছে বড় চমক। আমরা সেই জন্য গোপাল মাঠের মানুষকে সভায় যাওয়ার আহ্বান জানালাম।” দুর্গাপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর সভায় আসার আমন্ত্রণপত্র বিলি করছেন বিজেপি কর্মীরা। কর্মীরাও নেতৃত্বের সঙ্গে থেকে ভিড় বাড়াচ্ছেন নেহরু স্টেডিয়ামে। কিন্তু দুর্গাপুর জুড়ে এই ‘মেগা ইভেন্ট’-এর প্রচারে ব্যর্থ বিজেপি। মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ জানছে প্রধানমন্ত্রী আসছেন দুর্গাপুরে। কিন্তু কোথায় বা কখন সেই প্রচার নেই। তাই নেতৃত্ব ঘরে ঘরে গিয়ে আমন্ত্রণপত্র বিলিতে বাধ্য হলেন। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে লক্ষণ ঘড়ই বলেন, “খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই বড় কর্মসূচি হচ্ছে। তাই বৃহৎ আকারে প্রচার হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার থেকে তিন-চারটে জেলা জুড়ে প্রচার শুরু হবে।”
রাজনৈতিক সময়সূচির নিরিখে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিমধ্যেই ভোটের আবহে একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজ্য রাজনীতিকে করে তুলেছে জ্বলন্ত। বুধবার কলকাতার রাজপথে মিছিল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর হেনস্থার অভিযোগ তুলে পথে নামেন তৃণমূল নেতারা। অপরদিকে, একই দিনে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে দাবি করেন, রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে ভোটার তালিকা ভরানো হচ্ছে। সেই ইস্যুতে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তিনি।
সব মিলিয়ে, একদিকে দিল্লির প্রশাসনিক কর্তা নরেন্দ্র মোদির সফর, অন্যদিকে তৃণমূলের ঐতিহ্যবাহী ধর্মতলা সভার প্রস্তুতি— পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক আগুন-ঝরা সপ্তাহের সূচনা হয়ে গেল বলা যায়। দু’দলই রণকৌশল সাজাতে ব্যস্ত। ভোটের ঢাকে কাঠি না পড়লেও, রাজনীতির নাট্যশালায় ইতিমধ্যেই পর্দা উঠেছে প্রহরের আগেই।