দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিনের জল্পনার অবসান। অবশেষে স্পষ্ট হয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুর্গাপুরের সভায় থাকছেন না বিজেপি-র দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার সকালে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তিনি। কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ বলেন, “কর্মীরা ডেকেছিলেন। কিন্তু দল চায় না আমি সভায় থাকি।” এই মন্তব্যে ফের সামনে এল বঙ্গ বিজেপির আদি ও নব্য গোষ্ঠীর তীব্র দ্বন্দ্ব।
গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই প্রশ্ন — মোদির সভামঞ্চে জায়গা হবে কি না দিলীপ ঘোষের? সূত্রের খবর, প্রথমে দাবি করা হয়, দলের তরফে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরে দিলীপ নিজেই জানান, তাঁকে কোনও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বলেছিলেন, দল না ডাকলেও কর্মীদের ডাকে তিনি সভায় যাবেন একজন বিজেপি কর্মী হিসেবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে শোনা গিয়েছিল, তিনি যাচ্ছেন না। তারপরই সোশাল মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন দিলীপ। লেখেন, “আমরা থাকব, আপনি আসুন।” তাতেই নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছিল।
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে দেখা গেল দিলীপ ঘোষকে। সেখানেই বিজেপি নেতা জানান, দলের কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। কিন্তু মোদির সভার দিনেই কেন দিল্লি সফর? দিলীপের কথায়, “আমাকে কর্মীরা ডেকেছিলেন। তাই হ্যাঁ বলেছিলাম। পার্টি ডাকেনি। হয়তো পার্টি চায় না আমি যাই। আমি গেলে হয়তো অস্বস্তি হবে। তাই আমি দুর্গাপুর যাচ্ছি না। দিল্লিতে বিশেষ কাজে যাচ্ছি। পার্টিরই কাজ।”
দীর্ঘদিন ধরেই আদি-নব্য বিবাদে ক্ষতবিক্ষত বঙ্গ বিজেপি। একসময় রাজ্য বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে দাপটের সঙ্গে সংগঠন চালালেও, বর্তমানে অনেকটাই কোণঠাসা দিলীপ ঘোষ। শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর দলীয় অন্দরে কিছুটা ভারসাম্য ফিরবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু মোদির সভা থেকে দিলীপ ঘোষকে কার্যত দূরে সরিয়ে রাখার ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষণ নেই। তবে, এখন সকলের নজর ২১ জুলাইয়ের দিকে। তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের কর্মসূচির পাল্টা হিসাবে বিজেপির উত্তর কন্যা অভিযান কতটা বাস্তবায়িত হয়, আর দিলীপ ঘোষ সেদিন কী ভূমিকা নেন, তা দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়। দিলীপ ঘোষের প্রভাব কমতে থাকে। শুভেন্দু অধিকারীর উত্থান ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরার ফলে, ক্রমেই আড়ালে চলে যান দিলীপ। আজকের ঘটনা সেই রাজনৈতিক বাস্তবতাকেই আরও স্পষ্ট করে দিল।