দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ মালদহ থেকে আগত মালদা(ভাষাতাত্ত্বিক মতে বর্ণ বিপর্যয়) শব্দটির উৎসে আছে ওই অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায় 'মলদ' জনগোষ্ঠী।মালদায় মন্দির,মসজিদ,গির্জা ও বৌদ্ধ মঠ প্রচুর আছে।তাই মালদা কে বলাহয় সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ নিদর্শন।আবার মালদাকে বলা হয় 'আমের শহর'।
কোলকাতা থেকে ৩৩০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত মালদা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গেলে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগবে।মালদার অন্যতম দর্শনীয় স্থান অবশ্যই গৌর।এটাই ছিল একসময় বাংলার রাজধানী।গৌড় মালদহের সবচেয়ে সুন্দর ও প্রাচীন পর্যটন স্পটগুলির মধ্যে একটি। এটি পবিত্র গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত মালদার প্রাচীনতম আবাসিক উপনিবেশ।
গৌড়ের ইতিহাস মোটামুটিভাবে ১১৯৮ সালের পুরাতন, যখন ইসলাম শাসন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছিল। যদিও অবস্থানটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত রয়েছে, তবুও এর আকর্ষণীয় ইতিহাস এবং দর্শনীয় স্থাপত্যের কারণে সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। দ্বিতীয় স্থান হিসাবে আমরা বেছে নেবো ফিরোজ মিনার। ফিরোজ মিনার দাখিল দরওয়াজা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৪৮৫-১৪৯৫ সালে, সুলতান সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ এই জনপ্রিয় মিনারটি নির্মাণ করেন।এই পাঁচতলা কাঠামো, যা কুতুব মিনারের অনুরূপ, ২৬ মিটার লম্বা এবং ১৯ মিটার চওড়া।৮৫ টি ধাপের একটি পেঁচানো সিঁড়ি আছে যা টাওয়ারের চূড়া পর্যন্ত নিয়ে যায়।তুঘলক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ফিরোজ মিনারের দেয়াল সুন্দর পোড়ামাটির অলঙ্করণে সজ্জিত।
এর পরেই যেতে হবে হিন্দু মন্দির জহুরা কালিমন্দির।মন্দিরটি ১১৫৯-১১৭৯ সালে রাজা বল্লাল সেন দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।মন্দিরটি একদিকে সবুজে ঘেরা এবং অন্য দিকে আমের বাগান দিয়ে ঘেরা। দেবী জহুরার তিনটি লাল মুখ এই মন্দিরের প্রধান আরাধ্য দেবতা।মন্দিরের সম্মুখভাগে তিনটি মুখ দেবী মহাকালী, মহালক্ষ্মী এবং মহা সরস্বতী হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে।শুধুমাত্র মঙ্গলবার এবং শনিবার ভক্তরা মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসেন কারণ অন্যান্য দিন মন্দির বন্ধ থাকে।
মালদার অজস্র দর্শনীয় স্থান থাকলেও সব জায়গায় হয়তো যাওয়া যাবে না।তবে এই কালিমন্দিরেই পরেই আমরা যাবো দাখিল দরোয়াজা -যা গৌড়ের একটি উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক। এটি ১৫ শতকের দুর্গের ধ্বংসাবশেষ যা আজও তার প্রাচীন এবং মনোমুগ্ধকর গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দাখিল দরওয়াজা, প্রাচীন দুর্গ গৌড়ের প্রবেশদ্বার হিসাবেও পরিচিত, এটি সুলতানি বাংলার স্থাপত্য ইতিহাসের বৃহত্তম ভবন। প্রধান ফটকটি দুর্গের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের কাছে একটি বিশাল লাল রঙের প্রাচীর যা দুর্গের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষকে ঘিরে রয়েছে। প্রবেশপথটি বাংলায় নির্মিত সবচেয়ে মজবুত এবং সুন্দর প্রবেশপথ।
চামকাটি মসজিদ না দেখলে মালদা ভ্রমণ সম্পূর্ণ হবে না।তাই শেষে চলুন ওই মসজিদে।সুলতান ইউসুফ শাহ ১৪৭৫ সালে চমকাটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা হিন্দু মন্দির-শৈলীর স্থাপত্যের জন্য জনপ্রিয়।এই মসজিদের নাম কিছুটা অস্বাভাবিক।এটি চিকা মসজিদ নামে পরিচিত কারণ এটি অনেক চিকা বা বাদুড়ের আবাসস্থল।অত্যাশ্চর্য আরবি খোদাইগুলি এখনও ধ্বংসাবশেষে আংশিকভাবে দৃশ্যমান। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও, মালদহের এই ১৪ শতকের চামকাটি মসজিদ ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য।মালদা শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান রামকৃষ্ণ মিশন । চারপাশে বাগান আর গাছ গাছালীর মধ্যে কিছুটা বেলুড় মঠের আদলে তৈরী এই অপূর্ব মন্দির দেখলেই মন ভরে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যা আরতির সময় এখানকার পরিবেশ হয়ে ওঠে সত্যিই অসাধারণ।
আর দেখবেন বাঁধের কালী মন্দির । রামকৃষ্ণ মিশনের ঠিক বাইরেই চার রাস্তার মোড়ে এই ছোট অথচ সুন্দর কালী মন্দির, সুন্দর এখানকার নীল রঙের প্রতিমা। আলাদা করে দেখার হয়তো কিছু নেই, তবে রামকৃষ্ণ মিশনে এলে তার গায়েই এই কালী মন্দিরটি দেখা যেতেই পারে।
আপনি যদি শহরের জীবনের কোলাহল থেকে দূরে যেতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই মালদহের এই জায়গাগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। শিয়ালদা ও হাওড়া থেকে অজস্র ট্রেন যায় মালদায়।মালদা স্টেশনের পাশেই বেশ কয়েকটা হোটেল ও লজ আছে।পছন্দ মতো একটিতে ঢুকে যান দু'দিনের জন্য।