ভুবনেশ্বর ও বালেশ্বর, ১৫ জুলাই : আশঙ্কাই সত্যি হল, মৃত্যু হল ওড়িশার বালেশ্বরের নির্যাতিতার। সোমবার বেশি রাতের দিকে ভুবনেশ্বর এইমসে মৃত্যু হয় তাঁর। ভুবনেশ্বর এইমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১১.৪৬ মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বরের ওই কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার থেকে ভুবনেশ্বর এইমসের বার্ন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তরুণীকে বাঁচানোর জন্য সম্ভাব্য সবরকম পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তাঁর বৃক্কতন্ত্রও প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
বালেশ্বরে কলেজেরই এক বিভাগীয় প্রধান ওই ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করেছিল বলে অভিযোগ। তা নিয়ে কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গ্রহণ কমিটি (আইসিসি)-র কাছে গত ১ জুলাই অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। কী ভাবে মাসের পর মাস তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু এর পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। এর প্রতিবাদে কলেজ ক্যাম্পাসেও এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখান ওই নির্যাতিতা এবং তাঁর সহপাঠীরা। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছিলেন নিহত ছাত্রী। গত শনিবার এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও দেখা করতে যান তিনি। সেখান থেকে বেরিয়েই কলেজ ক্যাম্পাসে নিজের আগে আগুন ধরিয়ে দেন নির্যাতিতা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন আরও এক ছাত্র। দু’জনকেই সঙ্গে সঙ্গে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীর দেহের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে শনিবারই ভুবনেশ্বর এইমসে স্থানান্তর করা হয় তরুণীকে। কিন্তু, প্রাণে বাঁচানো গেল না।
মেয়েটির মৃত্যুর বিষয়ে কংগ্রেস নেতা ইয়াশির নওয়াজ বলেন, "সন্ধ্যায় আমরা যখন এইমসের ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করি, তারা স্পষ্টভাবে বলে দেয় যে, তার শরীরের ৯৫% পুড়ে গিয়েছে, মেয়েটির বাঁচার সম্ভাবনা কম। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে একজন ছাত্রী এমপি, এসপি, অধ্যক্ষ, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচারের ভিক্ষা করছিল, কিন্তু এবিভিপি নেত্রী হওয়ার পরেও সে নিরাপদ ছিল না। আমরা প্রতিবাদ করছি, কারণ তারা ভোররাত ২টোয় ময়নাতদন্ত করছে। সরকার, পুলিশের সহায়তায়, ময়নাতদন্তের পরে মৃতদেহ নিয়ে যেতে চায়। উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা এবিভিপির সহায়তায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি বিজেপি সরকারের দোষ। উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজকে অপসারণ করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।"
বিজেডি নেত্রী সুলতা দেও বলেন, "এই সরকার দলিত ও আদিবাসীদের বিরুদ্ধে। রাতে কেন ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল? রাতেই মৃতদেহ আনা হয়েছিল যাতে কেউ জানতে না পারে।" বিজেডি নেত্রী ইপ্সিতা সাহু বলেন, "কেন বিজেপি নেতাদের হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমাদের বাইরেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজের পদত্যাগ করা উচিত।"