দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ইসরায়েলি হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল ইতিমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে এবার দক্ষিণ গাজাও গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা সেখানকার লোকজনকে আরও দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে যুদ্ধবিরতির পর দুই দিনে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার ইসরায়েল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় ৪০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে তারা। এর মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে বেশ কিছু হামলা চালানো হয়েছে। বড় ধরনের হামলার অংশ হিসেবে শুধু শুক্রবার দিবাগত রাতেই ৫০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।উত্তর গাজায় অভিযানের সময় বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। সেখানকার বাসিন্দাদের বেশির ভাগই তখন দক্ষিণাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এখন দক্ষিণ গাজায়ও ইসরায়েল হামলা জোরদার করেছে। গাজার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এখন তারা কোথায় যাবে?
গাজায় ইসরায়েলের টানা ৪৭ দিনের হামলার পর ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এ যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দুই দফায় মোট তিন দিন বাড়ানো হয় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আন্তর্জাতিক চাপ ও হামাসের পক্ষ থেকে নতুন করে প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও রাজি হয়নি ইসরায়েল। গত শুক্রবার সকাল থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।যুদ্ধবিরতিতে শুরু থেকে আগ্রহ ছিল না ইসরায়েলের। গতকাল দেশটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের আলোচনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আলোচনায় ‘অচলাবস্থার’ কথা জানিয়ে কাতারের দোহা থেকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রতিনিধিদলকে দেশে ফিরতে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া সংস্থাটির প্রতিনিধিদলকে ইসরায়েলে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস চুক্তির নিজেদের অংশ পালন করেনি। চুক্তি অনুযায়ী শিশু ও নারীদের মুক্তি দেওয়ার কথা। এ নিয়ে হামাসের কাছে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছিল এবং তারা সেটি অনুমোদনও করেছিল।
তবে সমঝোতা না হওয়ার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। তারা বলছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জিম্মি নারী সেনাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে একটি তালিকা দেওয়া হয়। বয়স্ক বন্দিবিনিময়ে দেশটি রাজি হয়নি।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলের হামলায় ১৯৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৫০ জন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বেশির ভাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি হাসপাতালগুলোতে মেঝেতে রেখেও আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা না পেয়ে আহতদের বড় একটি অংশ মারা যাচ্ছেন।