Festival and celebrations

11 months ago

Durga Puja 2023 : বাবুদের পুজোয় ইংরেজদের আমোদ বন্ধ করতে পাস করা হয় এই আইন

Babu Calture and Durga Puja (Symbolic Picture)
Babu Calture and Durga Puja (Symbolic Picture)

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ শহর কলকাতায় তখন বাবু কালচারের যুগ। ইংরেজদের কে টেক্কা দিয়ে শহুরে বাবুরা মালকোচা দুলিয়ে আমোদ প্রমোদ বাইজি গান আর দামি সুরার চুমুকে নিজেদের জীবন যৌবনকে রঙিন করে তুলেছে, বাবুআনায় তখন তারা টেক্কা দিতে পারে সাহেব সুবুদের।সময়টা ১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের মাঝামাঝি, কলকাতার দুর্গাপুজো তখন বদলে গিয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুর্গোৎসবে। এ উৎসব ঘিরে এদেশের মানুষজনদের যত না আনন্দ-আহ্লাদ থাকত, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আমোদ ছিল কোম্পানির লোকেদের।যাতে লাগাম কষতে শেষটায় ১৮৪০ সালে কোম্পানির ‘দশ নম্বরি আইন’ পাস করতে হয়। 

হিন্দুদের দুর্গাপুজো রাতারাতি কীভাবে কোম্পানির পুজোয় পরিবর্তিত হয়ে যায়, তার কারণটি বেশ স্পষ্ট। গবেষকদের মতে, ইংরেজদের ‘তুষ্টিকরণ নীতি’-ই ছিল এর নেপথ্যের কারণ। ইংরেজরা তখনও এদেশে জাঁকিয়ে বসেনি, তারা তখন অনকাংশেই ব্যবসায়ী এবং এদেশের আধা-শাসক। যার ফলে তারা চাইছিল, এদেশের মানুষদের খুশি করতে। যে কারণে এদেশের যাবতীয় ধর্মাচারের পুরো-পৃষ্ঠপোষকতা করতে নিজেরাই এগিয়ে আসে তারা। তখনই দুর্গাপুজোগুলিতে পৃষ্ঠপোষকতা শুরু হয় তাদের তরফে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ১৮১৯ সালে ‘ক্যালকাটা জার্নাল’ লিখছে, ‘এই প্রেসিডেন্সিতে ইতিপূর্বে এ ধরনের পুজো কেউ কখনও দেখেনি। সুগায়িকাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল অর্থব্যয়ে আনা হচ্ছে।’ কলকাতার এই পুজোগুলিতে বাইজি নাচ ছিল মুখ্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এ ব্যাপারে ১৮২৬ সালের গভর্নমেন্ট গেজেট লিখছে, ‘গোপীমোহন দেবের বাড়িতে নাচবার জন্যে সুদূর ব্রহ্মদেশ থেকে একদল সুন্দরী এবং সুগায়িকা নর্তকী আনা হয়েছে।’ দুর্গাপুজোর বাইজি নাচ ঘিরে ছিল এক বিরাট প্রতিযোগিতার আসর।

আবার , ১৮২৯ সালে ‘সমাচার দর্পণ’ লিখছে, ‘প্রাক-কোম্পানি যুগের পুজো ছিল সর্বত্র প্রতিমা না হউক ঘটপটাদি এবং শ্রীশ্রীশালগ্রাম শিলাদির পুজো। আর সেসময়ের আদর্শ মহারাজা হলেন কৃষ্ণচন্দ্র। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রথমত এই উৎসবে বড় জাঁকজমক করেন।’

সেই সময় ধনী বাড়ির কর্তারা অপেক্ষা করতেন ছাপার হরফে নিজেদের নাম দেখার হেতু। ক্যালকাটা গেজেট এক খবরে লিখছে, ‘প্রাচ্যের জাঁকজমকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপিয়ান রুচি’ ইত্যাদি। তার সঙ্গে নাচ! রামচন্দরের বাড়িতে যেমন নিকি নেচেছে, তেমন রূপচাঁদ রায়ের বাড়িতে নেচেছে বুনু। জনৈকা কাশ্মীরি সুন্দরী।’

ধীরে ধীরে দিন বদলে গেল, ক্রমেই বাঈজী গানের আসরের সংখ্যা কমতে থাকল।সেসময়ের জনপ্রিয় কাগজ ‘জন বুল’ দুর্গোৎসবের ভাটা পড়ার বেশ কয়েকটি কারণকে, বলতে গেলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘ব্রিটিশ শাসকদের বোধোদয়’ তথা ‘জ্ঞানবৃদ্ধি’।এই বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যায় ১৮৩৩ সালের একটি ঘটনায়। যখন ডিরোজিওর 'ইয়ং বেঙ্গল’ জোরদার আওয়াজ তুলল কোম্পানির সহায়তায় বাবুদের দুর্গোৎসবের বেহিসেবি খরচপত্তর নিয়ে। তারা বলল, দুর্গাপুজোয় বাইজি নাচিয়ে আর খানাপিনা করে কোম্পানি সরকার এবং বাবুরা সাধারণ মানুষের কী এমন হিত সাধন করছে? শুধু তাই নয়। কলকাতার বড়মানুষদের কী কী বিষয়ে খরচ করা উচিত সে বিষয়ে তারা একটি ফর্দ অবধি পেশ করল। যার মধ্যে ছিল ‘বিলাতে গমনোপযুক্ত জাহাজ নির্মাণ’, ‘নানাবিধ শিল্প যন্ত্র স্থাপন’’ থেকে ‘চাষ বৃদ্ধি’র দিকে নজর দেওয়ার মতো যুগান্তকারী দাবি।

এই পদক্ষেপে নড়ে চড়ে বসল কোম্পানি, আর সে বছরই বের হল কোম্পানির বিখ্যাত ঘোষণা, হিন্দুদের মন্দিরাদি থেকে সরকারিভাবে হাত উঠিয়ে নিচ্ছেন তারা। এর ক’বছরের মধ্যেই ১৮৩৭ সালে বন্ধ হয়ে গেল হিন্দুর উৎসবে তোপ দাগানো আর দুর্গাপুজোর ধুমধাম। অবশেষে ১৮৪০ সালে এল বিখ্যাত ‘দশ নম্বরি আইন’। যে আইনের সহজ মর্ম ছিল, ‘নেটিভরা প্রজা, আমরা রাজা। ক্রমেই ভেদাভেদ অঙ্কিত হল ধর্মের ভেদাভেদ। 

You might also like!