পূর্ব বর্ধমান, ২০ সেপ্টেম্বর : জঙ্গলে ঘেরা কালিকাপুর জমিদারবাড়ির আকর্ষণে এ বাড়িতে ছবি শুটিং হয়েছে। গয়নার বাক্স, গুপ্তধন রহস্য ইত্যাদি ছবির শুটিংও হয়েছে এখানে। এছাড়া মৃণাল সেন পরিচালিত নাসিরুদ্দিন শাহ ও শাবানা আজমি অভিনীত 'খন্ডহর' সিনেমার শুটিং হয়েছে কালিকাপুরের এই জমিদারবাড়িতেই। কিন্তু পুজোর সময়ে বদলে যায় এর আদল।
পুজোর ১৫ দিন আগে কৃষ্ণনবমী-তে বাদ্যযন্ত্র সহকারে ঘটে জল ভরে আনার পর শুরু হয় দেবীর বোধন, আজও ঐতিহ্য মেনে নিষ্ঠা ভরে কালিকাপুর জমিদার বাড়িতে পূজিতা হন দেবী। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। এই পুজো এলাকায় সাত ভাইয়ের পুজো নামেই খ্যাত।
বর্ধমান শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে কালিকাপুর জমিদারবাড়ি। দুর্গাপুর থেকে দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। ৩৫০ বছরের পুরনো এই বাড়ির প্রতিটি ইট-পাথরে কান পাতলে শোনা যায় পুরনো দিনের ইতিহাস।
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কালিকাপুর জমিদারবাড়ির পুজোর ইতিহাস সুপ্রাচীন। ৪০০ বছর আগে বর্ধমান রাজার দেওয়ান ছিলেন পরমানন্দ রায়। তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার সুবাদে তাঁর হাতে আসে কাঁকসার একটি বিরাট অংশের জমিদারিত্ব। ঘন জঙ্গল কেটে তৈরি হয় বসতবাড়ি।
তৈরি হয় পুকুর, বাগান, দুর্গামন্দির। পরমানন্দ রায় তাঁর সাত পুত্রের জন্য তৈরি করেন সাতমহলা প্রাসাদ, যা কালিকাপুর জমিদারবাড়ি বলে খ্যাত। অনেকে বলেন রাজবাড়ি। সাতভাই একসঙ্গে পুজো করতেন বলে এই পুজো সাতভাইয়ের পুজো নামেই এলাকায় বেশি পরিচিত।
তিন দিকে ঘেরা একটি আটচালা মণ্ডপ। অতীতের জৌলুসে কিছুটা ধুলো জমলেও রীতিনীতি রয়ে গিয়েছে একই রকম। পুজোর ১৫ দিন আগে কৃষ্ণনবমী তিথিতে বলি দিয়ে দেবীর বোধন হয়। এছাড়াও, সপ্তমী ও অষ্টমী ও নবমীতে ছাগ বলি হয়। অনেক আগে নবমীর দিন মহিষ বলি হত। বর্তমানে সেই রীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বোধনে দোলা করে পুকুর থেকে ঘটে করে জল আনা হয়। মন্দিরে নিত্য সেবা হয় মায়ের। পুজোর সময় আগে ভিয়েন বসত। দেশ-বিদেশের অতিথি সহ বর্ধমান রাজ পরিবারের সদস্যরাও আসতেন পুজোতে।পুজোর ক'দিন পালাগান ও যাত্রাপালার আসরে সরগরম থাকত গোটা এলাকা। গোটা গ্রামের মানুষের আনাগোনা ছিল জমিদারবাড়িতে। সকলের জন্য থাকতো অন্নকূট-এর আয়োজন।
এখন সেই আয়োজনের জাঁকজমক কমলেও নিষ্ঠায় কোনও ঘাটতি পড়েনি। পুজোর সময় সব বংশধরই একত্রিত হন জমিদারবাড়ি চত্বরে। এখনও পুজোর ক'দিন মায়ের দালানে ভিড় জমান গোটা গ্রামের মানুষ। ইতিহাসের বহু স্মৃতি আঁকড়ে আজও দাড়িয়ে আছে কালিকাপুর জমিদারবাড়ি। এ বাড়ি আজও যেনো চুপিচুপি বলে চলে তার অতীত ইতিহাস।