দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ পুজো যায় তবে থেকে যায় তার আমেজ। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরটুলি জুড়ে চোখে পড়ে ব্যস্ততার ছবি। কাদা মাখা শিল্পী হাত মেতে ওঠে সৃষ্টির আনন্দে। শিল্পীর হাতের ছোঁয়াও রুপ নেয় মৃন্ময়ী মা। একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি ৷ কিন্তু শাস্ত্র বলে সেই আদলকে ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিস আবশ্যক। যেমন, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হবে দেবীমূর্তি ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷
কিন্তু কেন এই রীতি ? সমাজ যাদের গ্রহন করে না নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ ৷প্রসঙ্গত, সমাজের অনেক নিয়মই শাস্ত্র বহির্ভূত হলেও তা মেনে চলা হয়। র্গাপ্রতিমা তৈরিতে শুধু যৌনপল্লিরর মাটি ব্যবহারের রীতি রয়েছে তা নয়, আরও অনেক রকম মাটির কথাই বলা হয়েছে। যেমন শুয়োরের খাত, অর্থাৎ শুয়োর যে মাটি কেটেছে।সেই মাটি নিয়ে আসা। এছাড়াও হাতি দাঁত দিয়ে যে মাটি কেটেছে, সেই মাটি। তবে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির কথায়, হাতি যে দাঁত দিয়ে মাটি কাটে না।
প্রসঙ্গত,জমিদারবাড়ির লোকেরা যখন পুজো শুরু করেন, তখন তাঁরাই তৈরি করেছেন এই নিয়ম। পুরাণে এরকম কোথাও উল্লেখ নেই যে যৌনপল্লির মাটি দিয়েই দুর্গাপুজো হবে। 'দুর্গাপুজো যেহেতু মহোত্সব, তাই ওই সময় সমাজে জাতিভেদ, অন্তজ শ্রেণি ইত্যাদি মনে রাখা হয় না। এটা হল সবচেয়ে বড় যুক্তি। যেমন, সমাজে নানা অস্পৃশ্যতা রয়েছে, সমাজে শ্রেনী বিভাজনকে এই পুজোর কটা দিন সরিয়ে রেখে সবাই একসাথে আনন্দে মেতে ওঠার জন্য না না রীতির প্রচলন করা হয়েছে, যাতে সেই ভেদাভেদ ঘুচে যায়। সেরকমই যৌনপল্লি থেকে মাটি এই কারণেই দিয়ে মাতৃমূর্তি গড়ে তোলা হয়, যাতে আমরা যৌনকর্মীদের ঘৃণা না করি।
উল্লেখ্য, চণ্ডীর মধ্যে একটা শ্লোক আছে, স্ত্রেয়ঃ সমত্সা সকলা জগত্সু। অর্থাত্, সব স্ত্রী-ই আমি, অন্য কেউ নেই। দেবী বলছেন, এই যে ব্রাহ্মবাদী ভক্তি, এই যে ব্যপ্তি, সর্বত্র তিনি-ই আছেন। তাই যৌনপল্লির মাটি মিশিয়ে নেওয়া হয় দুর্গাপ্রতিমা তৈরির মাটির সঙ্গে।'