দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ গাইনদের বাগানবাড়িতে মার্টিন কোম্পানির বাষ্পচালিত ট্রেন থামত 'গাইন গার্ডেন' স্টেশনে! আর ট্রেন থেকে নেমে ইংরেজরা যেতেন সে বাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে।এক সময় সময়ে এই পথে মার্টিন কোম্পানির ট্রেন চলত।
ধান্যকুড়িয়ার মানুষ এক ডাকে চেনেন গাইনদের। এই এলাকায় যদিও গাইন ছাড়াও বল্লভ ও সাউদের আধিপত্য ছিল একটা সময়ে। তবে গায়েনদের প্রতিপত্তিই ছিল সর্বাধিক। তাদের এই বাগানবাড়িতেই প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্বাক ছবি 'কপালকুন্ডলা', গুরু দত্তের 'সাহেব বিবি অউর গোলাম' কিংবা হাল আমলে ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ছবি 'সত্যান্বেষী'র শ্যুটিং হয়েছে।
গাইন পরিবারের আদিপুরুষ গোবিন্দচন্দ্রের ছিল মূলত পাটের ব্যবসা। পাট তখন ইংরেজদের কাছে সোনার সমতুল্য। ইংরেজদের সঙ্গে সেই পাটের ব্যবসা করেই গোবিন্দচন্দ্রের ধনসম্পত্তি ফুলেফেঁপে ওঠে। 'বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স'-এর সদস্য ছিলেন গোবিন্দচন্দ্রের পুত্র মহেন্দ্রনাথ। তাঁকে 'জুট লর্ড' বলা হত। তাঁর আমলেই গাইনদের পাটের ব্যবসার বিপুল শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ইংল্যান্ড ও ইউরোপ জুড়ে বিরাট চাহিদা তৈরি হয় গাইনদের পাটের। আর সেই সূত্রে ইংরেজদের আনাগোনা শুরু হয় গাইন বাড়িতে। গোবিন্দচন্দ্রের আমলে 'গাইনদের রাজবাড়ি'র যে মূল মহল নির্মিত হয়, পুত্র মহেন্দ্রনাথ তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটান। শুধু তা-ই নয়, মহেন্দ্রনাথের আমলে গড়ে ওঠে দুর্গের আদলে এক বিরাট বাগানবাড়ি। যা 'গাইনদের বাগানবাড়ি' নামে জনপ্রিয়।
দেখতে দেখতে এ পুজো এবার ১৮০ বছরে পা দিল।গাইন রাজবাড়িতে এক চালার প্রতিমায় পুজো হয় প্রাচীন পরম্পরা মেনে, সাবেক রীতিতে। সন্ধিপুজোয় বাড়ির সবার সহযোগিতায় জ্বলে ওঠে ১০৮টি প্রদীপ। নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সন্ধিক্ষণে বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়। এই পরম্পরাও দীর্ঘ দিনের। রীতি মাফিক হয় নবমীর ধুনোপোড়া, কনকাঞ্জলি প্রথা। একটা সময়ে দশমীর দিন কাহারদের কাঁধে চেপে মা বিসর্জনযেতেন। তবে সে রীতি আর এখন পালন করা হয় না।