দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : টস হারার পরেই শুভমন গিলের চোখেমুখে ছিল অস্বস্তি, যেন আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন কঠিন এক দিনের ইঙ্গিত।চলতি সিরিজ়ের আগের চারটে টেস্টে উইকেটের জুজু বিশেষ ছিল না। কিন্তু ওভালের সবুজ উইকেটে মেঘলা পরিবেশে ব্যাটিং যে সহজ হবে না তার ইঙ্গিত ছিল।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ওভালে প্রথম দিন মোট ৬৪ ওভার খেলা হল। তাতেই সমস্যায় পড়লেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। ব্যর্থ দলের টপ অর্ডার। দিনের শেষে ভারতের রান ৬ উইকেটে ২০৪। অর্ধশতরান করে খেলছেন করুণ নায়ার (৫২)। সঙ্গে অপরাজিত ওয়াশিংটন সুন্দর (১৯)। এই জুটিই শেষ ভরসা ভারতের।
ওভালে প্রথম দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্ভাভাস ছিল। সকালে খেলা শুরুর আগেই বৃষ্টি হয়। ফলে টসেই দেরি হয়। এই পরিস্থিতিতে টস জিতলে যে কোনও অধিনায়ক চোখ বন্ধ করে বল করবেন। বেন স্টোকস না থাকায় ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করছেন ওলি পোপ। এর আগে তিনিও কোনও টেস্টে টস জিততে পারেননি। শুভমনও আগের চারটে টেস্টে টস হেরেছেন। ফলে যিনিই জিততেন, প্রথম বার জিততেন। এ বারেও শুভমন হারলেন। পোপ টস জিতে বল নিলেন।
এই টেস্টে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ প্রায় পুরোটাই বদলে গিয়েছে। কিন্তু ছবিটা বদলাল না। ক্রিস ওকস ও গাস অ্যাটকিনসনের সামনে সমস্যায় পড়েন ভারতের দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। আরও এক বার ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বলে সমস্যা হল যশস্বীর। বলের লাইনে ব্যাট নিয়ে যেতে পারলেন না তিনি। অ্যাটকিনসনের বলে মাত্র ২ রানে আউট হলেন। এই সিরিজ়ের আগে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করে তাঁকে বিশেষ সমস্যায় ফেলতে পারতেন না বোলারেরা। এই সিরিজ়ে তাঁর সেই দুর্বলতা প্রকট হয়েছে। বার বার ভিতরে ঢুকে আসা বলে আউট হচ্ছেন তিনি।
অপর ওপেনার রাহুল নতুন বল ভালই সামলাচ্ছিলেন। ধৈর্য ধরে খেলছিলেন। তিন নম্বরে নামা সাই সুদর্শনও ধরে খেলার চেষ্টা করছিলেন। ফলে রান তোলার গতি কম ছিল। ওকসের একটা বলে কাট মারতে গিয়ে ১৪ রানের মাথায় প্লেড অন হলেন রাহুল। তাঁর উইকেট ভারতকে বড় ধাক্কা দিল। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে ঝেঁপে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় খেলা বন্ধ থাকল দু’ঘণ্টা।
দুই ওপেনার আউট হওয়ার পর সুদর্শনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন শুভমন গিল। বাকিদের থেকে ভারত অধিনায়ককে ভাল দেখাচ্ছিল। শট খেলতে ভয় পাচ্ছিলেন না। দৌড়েও রান নিচ্ছিলেন। ফলে রান তোলার গতি বেড়েছিল। ঠিক তখনই ‘ব্রেনফেড’ হল শুভমনের। অ্যাটকিনসনের একটা বল হালকা হাতে খেলে সিঙ্গল নেওয়ার চেষ্টা করেন শুভমন। বল বেশি দূর যায়নি। টেস্ট কেন, ক্রিকেটের কোনও ফরম্যাটেই সেখানে সিঙ্গল হয় না। সেটাই করলেন ভারত অধিনায়ক। মাঝ পিচে পৌঁছে ফেরার চেষ্টা করলেন শুভমন। তত ক্ষণে বল ধরে উইকেটে ছুঁড়ে দিয়েছেন অ্যাটকিনসন। তাঁর সরাসরি থ্রোয়ে ২১ রান করে আউট হলেন শুভমন। এই ভুলের জন্য তিনি হয়তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। শুভমন থাকলে খেলার ছবিটা অন্য রকম হতে পারত। চলতি সিরিজ়ে ভারতের সেরা ব্যাটার তিনি। ঋষভ পন্থ না থাকায় তাঁর উইকেটের গুরুত্ব আরও বেশি ছিল। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের উল্লাস সেটা বুঝিয়ে দিল।
চা বিরতির আগে আরও এক বার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকল। বার বার ব্যাটারদের মাঠ ছাড়তে হচ্ছিল। এতে মনঃসংযোগ ধরে রাখা আরও কঠিন। সেটাই দেখা গেল সুদর্শনের ক্ষেত্রে। ১০০-র বেশি বল খেলার পরে জশ টংয়ের একটা বলে খোঁচা মেরে ফিরলেন তিনি। ৩৮ রান করলেন সুদর্শন। এই ইনিংসে ব্যর্থ আগের ইনিংসে শতরান করা রবীন্দ্র জাডেজা (৯)। টংয়ের আরও একটা বল তাঁর ব্যাটের খোঁচা খেয়ে উইকেটরক্ষকের কাছে গেল।
পন্থ না থাকায় এই টেস্টে সুযোগ পেয়েছেন ধ্রুব জুরেল। করুণের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বেশি ক্ষণ পারেননি। ১৯ রান করে আউট হন। অপর প্রান্তে উইকেট পড়লেও এক দিক ধরে রেখেছিলেন করুণ। এই টেস্টে শার্দূল ঠাকুরের জায়গায় তাঁকে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যাবর্তনের পর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি করুণ। তিনি জানেন, এই টেস্টে রান না পেলে হয়তো আবার বাদ পড়বেন তিনি। তাঁর টেস্ট কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। তিনি রান করতে কতটা মরিয়া সেটা করুণের খেলায় বোঝা যাচ্ছিল। খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঝুঁকি নিচ্ছিলেন না।
ইংল্যান্ডকে সমস্যায় ফেললেন জেমি ওভারটন। ওকস, অ্যাটকিনসনেরা ভারতকে যতটা চাপে ফেলেছিলেন তা কিছুটা আলগা করে দিলেন তিনি। এই পিচেও ওভার প্রতি ৪ রানের বেশি দিলেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৩০ রান দিলেন ইংরেজ বোলারেরা। তাতেও কিছুটা সুবিধা হল ভারতের। দিনের শেষ পর্যন্ত টিকে রইলেন করুণ ও ওয়াশিংটন। এখন দেখার, দ্বিতীয় দিন এই জুটি ভারতকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।