কলকাতা, ২৪ ডিসেম্বর : আর কয়েকটা দিন বাদেই বিগত হচ্ছে ২০২৪ সাল। বিগত বছরটাতে বেশ কিছু সুখ স্মৃতি রয়েছে ভারতের খেলার দুনিয়ায়। দেশকে গর্বিত করেছেন একঝাঁক ভারতীয়। টি-২০ বিশ্বকাপ জয় থেকে শুরু করে গুকেশের দাবার বোর্ড মাতিয়ে বিশ্বজয়। বছর শেষে একবার ফিরে তাকানো যাক ভারতের সাফল্যের দিকগুলোতে ।
টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত:
ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ সালে প্রথমবার টি-২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। তারপর দীর্ঘ ১৭ বছর পর চলতি বছরে টি-২০তে বিশ্বসেরা হল রোহিত শর্মার ভারত। গোটা টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত খেলেছে মেন ইন ব্লু। পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নসদের ফাইনালে ভারত দক্ষিণ আফ্রিককে এক রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে। ২০২৩ সালে একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারের ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে খুশির জোয়ারে ভেসেছে গোটা দেশ।
কনিষ্ঠতম দাবাড়ু গুকেশের ইতিহাস:
চলতি বছরের ডিসেম্বরে ৬৪ খোপের যুদ্ধে ইতিহাস গড়লেন চেন্নাইয়ের ডি গুকেশ। কনিষ্ঠতম দাবাড়ু, মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন এই ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে চিনা প্রতিপক্ষ ডিং লিরেনের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে দাবার দুনিয়াকে চমকে দিয়েছেন এই ভারতীয় তরুণ দাবাড়ু। এই টুর্নামেন্টে হারিয়েছেন গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লিরেনকে। কনিষ্ঠতম হয়েছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভের নজির ভেঙে। আর বিশ্বনাথন আনন্দের পর গুকেশই দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেন। আর এই বছরেই দাবা অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত, সেই দলের সদস্যও ছিলেন গুকেশ।
প্যারিস অলিম্পিক উজ্জ্বল মনু ভাকেরের জন্য:
এবারের প্যারিস অলিম্পিক ভারতের কাছে খুব একটা উজ্জ্বল নয়। ভারত পেয়েছে ছয়টি পদক, পাঁচটি ব্রোঞ্জ, একটি রৌপ্য। এবার সবচেয়ে বড় দল পাঠিয়েও অলিম্পিক থেকে ভারত এই সাফল্য পেয়েছে।
কিন্তু এই অলিম্পিক হরিয়ানার এই মহিলা শুটার মনু ভাকেরের জন্য উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কারণ এই অলিম্পিকে দুটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন তিনি। এটি স্বাধীনতার পর প্রথম এবং ভারতের অলিম্পিক ইতিহাসে দ্বিতীয়, যদি ১৯০০ প্যারিস অলিম্পিকে নরম্যান প্রিচার্ডের দুটি রৌপ্য ধরা হয়।
ভাকের মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে একটি পদক জিতেছেন এবং অন্যটি ১০ মিটার এয়ার পিস্তল মিক্সড টিম ইভেন্টে সরবজোত সিং-এর সাথে। সবরজোতও হরিয়ানার বাসিন্দা।
প্যারালিম্পিকে ভারত পেল সর্বকালের সেরা সাফল্য:
এবার প্যারালিম্পিকে নতুন নজির গড়ল ভারতীয় কন্টিনজেন্ট। সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স করে ভারতের ঘরে এসেছে মোট ২৯টি পদক। মোট ৭ জন ভারতীয় অ্যাথলিট সোনা জিতেছেন। ভারতের পদক তালিকায় এসেছে ৯ রুপো এবং ১৩ ব্রোঞ্জও। পদক তালিকায় ১৮ নম্বরে শেষ করেছে ভারত।
গত ১১টি প্যারালিম্পিকে মোট ১২টি পদক জিতেছিল ভারত। কিন্তু নতুন দশকে পর পর দুইপ্যারালিম্পিকে তৈরি হল ইতিহাস। টোকিওতে মোট ১৯ পদক জিতে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছিল ভারত। তিন বছর পর সেই পদক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৯। অর্থাৎ আগের ১১টি প্যারালিম্পিকে যেখানে মাত্র ১২টি পদক ছিল ভারতের ঝুলিতে। সেখানে শেষ দুই প্যারালিম্পিকে পদকের সংখ্যাটা দাঁড়াল তাঁর চারগুণ, অর্থাৎ ৪৮। এই সংখ্যাটাই কিন্তু প্যারালিম্পিকে ভারতের সাফল্যের ছবিটা তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। পদক সংখ্যা থেকে পদক তালিকায় স্থান, সব জায়গাতেই প্যারিস অলিম্পিকে রেকর্ড গড়েছে ভারত।
আইসিসিতে ভারতের জয়:
দীর্ঘদিন সামলেছেন বিসিসিআই সচিবের দায়িত্ব। এরপর বছরের শেষে এসে ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে আইসিসির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অমিত শাহর পুত্র জয় শাহ। এই পদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেননি আর কোনও বোর্ড কর্তা। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ভারতের জয়ই। ক্রিকেট যেন বিশ্বজুড়ে আরও ছড়িয়ে পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য দিতে চান জয় শাহ। চেয়ারম্যানের কুর্সিতে বসেই বিরাট সাফল্য পেলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চলতে থাকা বিরোধ মিটিয়ে । হাইব্রিড মডেলে খেলার জন্য ভারত-পাকিস্তানকে রাজি করিয়েছেন জয় শাহর আইসিসি। আর আগামী দিনে ক্রিকেট যেন পাকাপাকিভাবে অলিম্পিকে থাকে, সে জন্যও চেষ্টা করে যাচ্ছেন জয়।