দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বড় বাজেট আর তারকা নির্ভর সিনেমার বাজারে নতুন হাওয়া এনে দিলেন পরিচালক সৌরভ পালোধি তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘অঙ্ক কি কঠিন’-এর মাধ্যমে। ঝাঁ-চকচকে শহুরে জীবনের বাইরের এক বাস্তবতায় তৈরি এই ছবির গল্প গড়ে উঠেছে তিন খুদে পড়ুয়ার স্বপ্নকে ঘিরে। তিন খুদে চরিত্র— বাবিন, ডলি এবং টায়া, বড় হয়ে হতে চায় ডাক্তার, নার্স আর ইঞ্জিনিয়ার। তাদের স্বপ্নের কেন্দ্র ‘আব্বুলিশ বাড়ি’—একটি আইনি জটিলতায় আটকে পড়া অসম্পূর্ণ বহুতল ভবন, যেখানে নেই জানালা-দরজা, কিন্তু আছে অফুরন্ত কল্পনা আর আত্মবিশ্বাস। এই বাড়িতেই তারা গড়ে তোলে তাদের ছোট্ট হাসপাতাল, যা হয়ে ওঠে ছবির প্রতীকী অঙ্গ। ছবির বাস্তবতা শুধু এই তিন শিশুর স্বপ্নে নয়, বরং তাঁদের চারপাশের জগতে। অতিমারির পর বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল, দিনমজুর বাবা, পরিচারিকা মা, যৌনকর্মী মা, মুসলিম ডেলিভারি বয় আর হিন্দু নার্সের প্রেম— প্রতিটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে জীবনের নানা টানাপোড়েন। অথচ কোথাও নাটকীয়তা নয়, বরং এক অনন্য সহজাত আবেগ এই গল্পকে গড়ে তোলে।
ঋদ্ধিমান, তপময় ও গীতশ্রী— তিন খুদে শিল্পী অসাধারণ সাবলীলতায় তাদের চরিত্রে প্রাণ দিয়েছে। পাশাপাশি প্রসুন সোমের শাহরুখ, পার্নো মিত্রের কাজল, শঙ্কর দেবনাথ, সঞ্জিতা, দীপান্বিতা নাথ, এবং ঊষসী চক্রবর্তী প্রত্যেকেই ছবিকে শক্ত ভিত দিয়েছেন। বিশেষ করে দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত— যেমন পরিচারিকার ৫০০ টাকা ফেরত দেওয়া বা টায়ার-এর মা-এর কৌটোয় টাকা জমানো— এই ছবির প্রেক্ষাপটে এক আশ্চর্য কোমলতার ছোঁয়া এনে দেয়। ছবির সংলাপ ও গান মন ছুঁয়ে যায়। ‘চাপ নিয়ে লাভ নেই’ গানটি যেমন মজার, তেমনই মনে রাখার মতো। দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের অসাধারণ সঙ্গীত ব্যবস্থাপনা ছবির চিত্রপট নিপুন ভাবে তুলে ধরে দর্শকদের সামনে।
এই সিনেমা যখন মুক্তি পেয়েছে, তখনই রাজ্যের এক ছাত্র পাশকুঁড়ার কৃষ্ণেন্দুর আত্মহত্যা আমাদের সমাজের নৃশংস সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়। ঠিক সেই সময়েই ‘অঙ্ক কি কঠিন’ যেন মন খারাপের পৃথিবীতে ভালোবাসার এক মলম। পরিচালক সৌরভ পালোধি প্রমাণ করেছেন— জীবন যত কঠিন হোক না কেন, একসঙ্গে থাকলে, পাশে থাকলে, অঙ্কের জটিলতাও সহজ হয়ে যায়। ‘অঙ্ক কি কঠিন’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি একটি বার্তা— কঠিন সময়ে কীভাবে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও স্বপ্ন দিয়ে পথ তৈরি করা যায়। ছবিটি পরিবারসহ দেখার মতো, এবং শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। জীবনের সহজ পাঠে ভর করে এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবিকতা হারিয়ে না ফেললে, কোনো অঙ্কই আসলে ততটা কঠিন নয়।