দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ চলতি মাসেই ‘কমপ্লান’-এর হেলথ ড্রিঙ্কের তকমা গিয়েছে কেন্দ্রের নির্দেশে। তার পরেই ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল অগ্রণী ফুড অ্যান্ড বেভারেজ় ব্র্যান্ড নেসলের জনপ্রিয় বেবিফুড ব্র্যান্ড সেরেল্যাক। স্যুইস তদন্তকারী সংস্থা পাবলিক আই এবং ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক-এর যৌথ উদ্যোগে করা এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশ, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় যে সেরেল্যাক বিপণন করেন নেসলে কর্তৃপক্ষ, তাতে প্রতি সার্ভিং-এ প্রায় 3 গ্রাম (2.7 গ্রাম) অ্যাডেড সুগার থাকলেও, গ্রেট ব্রিটেন এবং জার্মানির মতো প্রাইমারি মার্কেটে তা থাকে না।
নিজেদের রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণে বিশ্বের একাধিক দেশ থেকে নেওয়া 150 টি স্যাম্পল’কে বেলজিয়ামের একটি ল্যাব থেকে পরীক্ষা করিয়েছেন রিপোর্ট প্রস্তুতকারকরা। দ্য গার্ডিয়ানে রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই একাধিক দেশের জন্য সেরেল্যাকের মতো বেবিফুড, যা 6 মাসের শিশুখাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, প্রস্তুতে আলাদা আলাদা কম্পোজ়িশন ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, ভারতে 15টি সেরেল্যাক স্যাম্পল পরীক্ষা করার পর সেখানে প্রতি সার্ভিং-এ 2.7 গ্রাম অ্যাডেড সুগার থাকার প্রমাণ মিলেছে। যা প্যাকেজ়িং-এ উল্লেখও রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফিলিপিন্স থেকে সেরেল্যাক নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে প্রতি 8টির মধ্যে 5টি স্যাম্পলে প্রতি সার্ভিং-এ 7.3 গ্রাম অ্যাডেড সুগার থাকার প্রমাণ মিলেছে, যা কিন্তু প্যাকেজিং-এ কোথাও উল্লেখ করেননি কর্তৃপক্ষ।
সব বিতর্ক অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন নেসলে ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মুখপাত্র সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, আমাদের পণ্যের গুণমান ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। বেবিফুডের খাদ্যগুণ বজায় রাখাই আমাদের প্রধানতম প্রায়োরিটি। গুণমান ধরে রাখার প্রশ্নে কোনও সমঝোতা করেন না কর্তৃপক্ষ। যা ধরে রাখতে নিয়মিত তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে থাকি আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে।
পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে মিল্ক সিরিয়াল বেসড কমপ্লিমেন্টারি বেবিফুড-এর ভ্যারিয়্যান্ট ভেদে 30% পর্যন্ত অ্যাডেড সুগার কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই কমিয়েছেন, পণ্যের খাদ্যগুণে সমঝোতা না করেই। অ্যাডেড সুগার বলতে শুধুমাত্র চিনিকে বোঝায় না বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। তার মধ্যে স্যুইটনিং এজেন্ট যেমন সিরাপ ইত্যাদিও চলে আসে।
এটি বিপজ্জনক কেন সেই প্রশ্নে সবাই ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজ়েশন (হু) কর্তৃপক্ষের একটি রিপোর্টের দিকে আঙুল তুলছেন সবাই। যেখানে ‘হু’ জানিয়েছে, শিশুদের বয়স ২ বছর হওয়ার আগে কোনও রকম অ্যাডেড সুগারযুক্ত খাদ্য খাওয়া তার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না। বিশেষত মায়ের দুধ খায় যেসব শিশু, তাদের এইসব মেশানো খাদ্য খাওয়ানো হলে, তাদের ইটিং হ্যাবিটে অ্যাডিকশন চলে আসে এবং অল্পবয়সেই মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়ে যায়, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে।
অল্পবয়সে বেশি চিনি/অ্যাডেড সুগার এবং মিষ্টি খেলে ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ার পাশাপাশি বয়সকালে টাইপ-2 ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ধরনের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। ভারতে ইনফ্যান্ট নিউট্রিশন স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনে বেবিফুডে মাইক্রোনিউক্রিয়েন্টদের নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া থাকলেও অ্যাডেড সুগারের ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধসীমা বেধে দেওয়া নেই।
তবে বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া হওয়ার পর ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে স্বতঃপ্রণোদিত তদন্তে শুরু করা হয়েছে।