দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় সবচেয়ে প্রবীণরা যথাক্রমে দমদম, কলকাতা উত্তর, শ্রীরামপুর ও কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী। একজনের বয়স ৭৬, একজনের ৭৫, একজনের ৬৭ আর একজনের ৬৬। লোকসভা ভোটে টিকিট পাওয়া নিয়েও সংশয় ছিল এই প্রবীণ প্রার্থীদের। তবে গতকাল সবশেষে নিন্দুকদের বন্দুক দেখিয়ে জয়ের হাসি হাসলেন তৃণমূলের এই প্রবীণ প্রার্থীরা।
সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মালা রায়। তৃণমূলের সবচেয়ে প্রবীণ এই চার প্রার্থী তাঁদের পুরোনো দুর্গ ধরে রাখতে পারায় স্বাভাবিক ভাবেই যারপরনাই খুশির হাওয়া অনুগামী মহলে। যদিও চ্যালেঞ্জ যে কঠিন ছিল বেশ, সে কথা অকপটেই মানছে সুদীপের ঘনিষ্ঠ মহল। কেননা, তাঁর লড়াইটা ছিল ঘরে-বাইরে।
একদিকে প্রাক্তন দলীয় সতীর্থ তাপস রায়ের বিজেপি-তে দাঁড়ানোয়, সামনে ছিল কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্যদিকে আবার ছিল দলীয় সমস্যাও। তবে আগাগোড়াই সুদীপ ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। শেষ হাসি হেসে তাঁর বক্তব্য, ‘আমি জানতাম, উত্তর কলকাতা আমায় ফেরাবে না।’
লাখ তিনেকের বেশি ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র তাপসকে সুদীপ হারালেন প্রায় ৫৪ হাজার ভোটে। এই নিয়ে তিন বারের বিধায়ক সুদীপ মোট ছ’ বার জিতলেন লোকসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক সমালোচকরা বলছেন, কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে থাকা ২৬.৫% সংখ্যালঘু ভোটই বৈতরণী পার করে দিয়েছে তৃণমূলের। টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয়ের বহু আগেই আবার দমদমের তিন বারের সাংসদ সৌগত প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তিনি লড়বেন না।
টিকিট প্রাপ্তির পর অবশ্য নবীন প্রার্থীদের চেয়ে কোনও অংশে কম দৌড়াননি তিনি। বিপক্ষে ছিল এককালের দলীয় সতীর্থ, বিজেপি-র শীলভদ্র দত্ত এবং সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শীলভদ্রকে তিনি প্রায় ৬০ হাজার ভোটে হারিয়েছেন। নিজের কেন্দ্রে ধরে রেখেছেন দলীয় পতাকা। আবার দুঁদে আইনজীবী কল্যাণকে নিয়ে একসময়ে দলের অন্দরেই পক্ষে-বিপক্ষে নানা বাক্যবাণ দাগাদাগি হয়েছিল।
ফলে তিনি শ্রীরামপুর কেন্দ্রে আগের তিন বারের মতো টিকিট পাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল দলেরই মধ্যে। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি টিকিটই পাননি, সাড়ে চার লক্ষ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি-র কবীরশঙ্কর বসুকে প্রায় সওয়া লক্ষ ভোটে হারিয়েও দিলেন। গত দু’ মাস প্রচারের ময়দানে সিপিএমের তরুণ প্রার্থী দীপ্সিতা ধর তাঁকে কঠিন লড়াইয়ে ফেলবেন বলে মনে হলেও বাস্তবে দেখা গেল, তিনি রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
তুলনায় একাধিক বার দলবদলে কংগ্রেসে ফেরত যাওয়া বাদে মালা রায়ের কেরিয়ারগ্রাফ অনেক নির্ঝঞ্ঝাট। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ২০১৯-এ কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে জেতেন। এবারেও টিকিট পেতে সমস্যা হয়নি। এবং সিপিএমের সায়রা শাহ হালিমকে তৃতীয় স্থানে রেখে, বিজেপি-র প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে প্রায় ১.৮৫ লক্ষ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন।
তাঁর কথায়, ‘বিরোধীরা প্রচারে আমার নামে অনেক কুৎসা করেছে। আমি জানতাম, তৃণমূল নেত্রীর উন্নয়নের কথা ভুলে যাবেন না মানুষ।’
(জয়ী প্রার্থীদের মার্জিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে)