দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- নিম্নচাপ সরে গেলেও দুর্যোগ একেবারে দুয়ারে। রাতভর প্রবল বৃষ্টিপাত ঝাড়খন্ডে, আর তার জেরে হু হু করে জলস্তর বাড়ছে মাইথন, পাঞ্চেত জলাধারে। মরশুমে প্রথম বিপদসীমার কাছে পৌঁছাল জলস্তর। পরিস্থিতি সামাল দিতে আড়াই লাখ কিউসেক জল ছাড়ল ওই দুই জলাধারে। একনাগাড়ে বৃষ্টির দরুন ফুলে উঠল নদী নালা। আর তাতেই দামোদর নিম্ন অববাহিকায় দুর্যোগের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসল। দামোদর তীরবর্তি মানাচরে বন্যা পরিস্থিতি। চাষের জমি জলের তলায়।
প্রসঙ্গত, গভীর নিম্নচাপ ও সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখার জোড়া ফলায় প্রভাব পড়েছে বাংলায়। নিম্নচাপ বাংলা থেকে সরে যাওয়া রাতভর প্রবল বৃষ্টিপাত ঝাড়খন্ড, বিহারে। একনাগাড়ে বৃষ্টিতে ফুলে ওঠে মাইথন পাঞ্চেত জলাধার। জানা গেছে, বরাকর পূর্ব উপত্যকায় মাইথনে ১১২ মিলিমিটার, নন্দডিহি ১০৮ মিলিমিটার, উষরি ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই উপত্যকায় গড় বৃষ্টি হয়েছে ৬৫.৩ মিলিমিটার। বরাকর পশ্চিম উপত্যকায় গড় বৃষ্টি হয়েছে ৬৮.২ মিলিমিটার। দামোদর পূর্ব উপত্যকায় পাঞ্চেতে ৬৯ মিলিমিটার, রঘুনাথপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৮৩ মিলিমিটার, ডুমরি ৯৫ মিলিমিটার ও সহরাজ ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই উপত্যকায় গড় বৃষ্টি হয়েছে ৬২.৫ মিলিমিটার। দামোদর পশ্চিম উপত্যকায় তেনুঘাট ৩৫ মিলিমিটার, রামগড় ৮৬ মিলিমিটার, পত্রটুতে ১৪৯ মিলিমিটার।
আসানসোল কালিপাহাড়ি ৫৯ মিলিমিটার, রানীগঞ্জ ৩৪ মিলিমিটার, দুর্গাপুরে ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। একনাগাড়ে বৃষ্টির দরুন মাইথন, পাঞ্চেত জলাধার ফুলে ওঠে। দুই জলাধারে জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ডিভিসি সূত্রে জানা গেছে, মাইথন জলাধারে বিপদসীমা ৪৯৫ ফুট। এদিন ৪৯৪.৫০ ফুট পর্যন্ত জলস্তর রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার সকাল ৬ টা নাগাদ মাইথন জলাধার থেকে ২ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। যদিও দুপুর দুটো নাগাদ সেটা কমিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। আবার পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। পাঞ্চেত জলাধারে বিপদসীমা ৪২৫ ফুট। তেনুঘাটের ছাড়া জল ও উপত্যকায় একনাগাড়ে বৃষ্টির জল ঢোকায় হু হু করে বেড়ে ওঠে জলস্তর। মঙ্গলবার ৪২৪.৭০ ফুট জলস্তর রয়েছে। অন্যদিকে তেনুঘাট উপত্যকায় প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায়, সেখানে মঙ্গলবার সকালে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া শুরু করেছে। ওই জল পাঞ্চেেত জলাধারে ঢুকলে, সেটা আবার ৮০ হাজার কিউসেকে ঠেকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পাঞ্চেেতের জলস্তর আরও বাড়তে পারে। মঙ্গলবার সকাল থেকে পাঞ্চেত জলাধারে ৯০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া শুরু হয়। তেনুঘাটের জল ঢুকলে আরও বেশি জল ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মাইথন পাঞ্চেতের ওই জল ছাড়াই ফুলে ওঠে দামোদর। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই মাইথন ও পাঞ্চেত দুই জলাধারের নিম্নে বেশ কিছু বেনিয়ন্ত্রিত নদী, নালা রয়েছে। গাড়ুই, নুনী, তামলা, সিঙ্গারন, নদী নালার জল দামোদরে মিশছে। সব মিলিয়ে দামোদর ফুলে উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দামোদর উপরিভাগে তীরবর্তি দুর্গাপুর লাগোয়া বাঁকুড়ার সোনাইচন্ডীপুর গ্রামের চাষ জমি ছাড়াও ঘরবাড়ি জলমগ্ন। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রায় ৩৫ টি পরিবার রয়েছে গ্রামে। দামোদর ফুলে ওঠায় প্লাবনের আতঙ্কে গ্রামবাসীরা পার্শ্ববর্তী আটচালায় আশ্রয় নিয়েছে বাসিন্দারা। একই সঙ্গে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। যদিও রাত ১০ নাগাদ আড়াই লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়ার সঙ্কেত দিয়েছে সেচ দফতর। তাতে দামোদর নিম্ন আববাহিকার হাওড়া, হুগলির বেশ কিছু এলাকায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে নিম্ন দামোদর অববাহিকায় সোনামুখীর কসবা মানাচর, উত্তর অমৃতপাড়া, উত্তরবেশীয়া, ডিহিপাড়া মানাচর জল ঢুকতে শুরু করেছে। কৃষিজমি জলের তলায়। চাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুজোর মুখে চরম লোকসানের মুখে চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে।
আচমকা জল ছাড়ায় ডিভিসির দিকে আবারও অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ রাজ্য সরকারের। যদিও,ডিভিআরআরসির সদস্য সচিব শশী রাকেশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন," প্রবল বৃষ্টিপাতের দরুন মাইথনে জলস্তর আচমকা বেড়ে উঠেছিল। রাত্রে অপ্রত্যাশিত ৩ লক্ষ একরফুট জল ঢুকে যায় মাইথনে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকালে ২ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়। দুপুর পর্যন্ত সেটা আরও কমানো হয়েছে। পাঞ্চেত সকালে ৯০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। একই সঙ্গে তেনুঘাট থেকে জল ছাড়া শুরু করেছে। ওই জল পাঞ্চেত জলাধারে ধরে রাখার জন্য জল ছাড়তে হচ্ছে পাঞ্চেতে। তেনুঘাটের জল পাঞ্চেতে এসে ঢুকবে। লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হয়েছে।"