কলকাতা, ৪ আগস্ট : টানা ১০ বছর ধরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর দায়িত্ব পালন করছেন সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। কিন্তু বিগত ১৭ দিন ধরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেই পারছেন না।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি জোড়া চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
উপাচার্যের বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই দেখতে পাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র এবং কিছু শিক্ষাকর্মী চত্বরে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন সময় শিক্ষক, আধিকারিক এবং উপাচার্যের দফতরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। সবসময় যে বিক্ষোভের কারণগুলি সঙ্গত, এমনও নয়।
উপাচার্যের দাবি, গত ১৮ জুলাই শেষ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন ছাত্রদের বক্তব্য ছিল, “লাইব্রেরিতে বই নেই। আমি বলি, না থাকলে তালিকা তৈরি করে লিখিত জমা দিতে। বই নিশ্চিত ভাবেই আছে, পত্রপত্রিকাও আছে। তা-ও নির্দিষ্ট কোনও বই লাগলে, লিখিত ভাবে জানালে, তা সমাধানের চেষ্টা করব। আর্থিক সঙ্কট থাকলেও বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অগ্রাধিকার পাবে।’’
সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘আমার ঘরে তখন শিক্ষক, আধিকারিকরা ছিলেন। ছাত্ররা চলে গিয়ে, ফের ১০ মিনিট পর ফিরে এসে জানান, তাঁরা লিখিত দেবেন না। বরং অন্য প্রশ্ন তোলেন। জানতে চান, রেজিস্ট্রার কেন দফতরে আসেননি। আমি জানাই, ছুটিতে রয়েছেন উনি। ছাত্ররা জানতে চান, তার জন্য দরখাস্ত দিয়েছিলেন কি!’ আমি জানাই, হ্যাঁ। এর পর দরখাস্ত দেখতে চান ওঁরা। আমি জানিয়ে দিই, আধিকারিকের ছুটির দরখাস্ত দেখা, ছাত্রদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
এর পর ঘরে বসে নানা মন্তব্য করতে থাকেন ছাত্ররা। জানান, শ্রেণিকক্ষগুলি যেহেতু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়, উপাচার্যের দফতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রয়েছে, তাই প্রতিদিন সকালে সেখানে এসেই অবস্থান বিক্ষোভ করবেন তাঁরা। তার পর থেকেই আর যাওয়া হয়নি।’’
এই বিক্ষোভকারী ছাত্র এবং শিক্ষাকর্মীরা কোনও সংগঠনের কিনা জানতে চাইলে, সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘কেউ যদিও পতাকা নিয়ে আসেননি, কিন্তু এই ছাত্ররা যে শাসকদলের অনুগত বা অনুগামী, তাতে সন্দেহ নেই।’’ শিক্ষাকর্মীদের একাংশ যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, যাঁদের জন্য শিক্ষক এবং আধিকারিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তাঁদের সঙ্গেও শাসকদলের সংযোগ রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন সব্যসাচীবাবু।
তাঁর দাবি, মে মাসে শিক্ষাকর্মীদের শূন্যপদ পূরণে বহিরাগত সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তার ঠিক আগে থেকেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। দুইয়ের মধ্যে কোনও সংযোগ রয়েছে কিনা, তা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেন।
নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে এই মুহূর্তে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তার মধ্যেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি চরমে। উপাচার্যের চিঠির ব্যাপারে রাজ্যের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে তাঁর পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন তিনি।