Livelihood message

1 year ago

Inspirational: পুরুলিয়ার এক সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প

The story of an ordinary man from Purulia becoming extraordinary
The story of an ordinary man from Purulia becoming extraordinary

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ  ভারতের মধ্যে সবথেকে সমৃদ্ধশালী রাজ্যের মধ্যে অন্যত্তম পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগলিক অবস্থান তাকে প্রাকৃতিক সম্ভারে সমৃদ্ধ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু বরাবরই কৃষিকাজের উপযোগী, দেশের ৬০% দানা শষ্যের চাষ হয়ে থাকে এ রাজ্যে। যার উপর  নির্ভর করে এই রাজ্য তথা দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো আরো সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। শুধু মাত্র কৃষি কাজ নয়, কৃষিকাজের সাথে সাথে গবাদি পশু পালন ও রাজ্যের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে।বর্তমানে গবাদি পশু ও হাস মুরগি এবং আরো বিভিন্ন লুপ্তপ্রায় পাখির চাষ ও সংরক্ষন পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিকাঠামোর পরিবর্তন এনেছে। এ রাজ্যের কৃষি ও গবাদি পশু ও না না ধরনের পাখির চাষ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছোট ছোট বেসরকারি বা আধা সরকারি সমবায় তৈরী হয়েছে যার মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার বেকার যুবক যুবতীদের সাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন। তেমন ই একটি ছোট্ট সমবায় পুরুলিয়ার আমার মাতৃভূমি স্বনির্ভর গোষ্ঠী।  


আমার মাতৃভূমির পথচলা শুরু হয় ২০১৬ সালে, রাকেশ বিশ্বাস মহাশয়,বিদ্যাসাগর মাহাত ও মহাদেব কিস্কু  মাত্র ১৪ জন লোকবল নিয়ে শুরু করেন এই ছোট্ট প্রয়াস। গবাদিপশু ও হাস মুরগির চাষের ফার্ম ও কৃষিকাজ দিয়ে শুরু হয় এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এর পর রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত কৃষিমেলাতে প্রতিযোগি হিসাবে সামিল হয় আমার মাতৃভূমি। ২০১৭-১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মান বাজার সাব ডিভিশন মেলায় বিজয়ীর পুরষ্কার জিতে নেয় "আমার মাতৃভূমি"। এই সাফল্য এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে আরো এগোনোর অনুপ্রেরনা দেয়। ক্রমেই ভাল কাজের নিরিখে এবং উৎপাদিত দ্রব্যাদির গুনগত মানের ভিত্তিতে  আমার মাতৃভূমিকে প্রানী সম্পদ দফতর মারফত জেলা পারিষদের তালিকা ভুক্ত করা হয় যাতে তারা বিভিন্ন ব্লকে কাজ করতে পারে। এর পর এই ২০১৯ সালে মাটি উৎসবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা কৃষক সন্মানে সন্মানিত হয় আমার মাতৃভূমি। এরপর রাজ্যের কৃষি দফতর, মাটি সংরক্ষণ দফতর ছাড়াও আরো বিভিন্ন দফতরের সাথে কাজ করেছে এই গোষ্ঠী। এই সনির্ভর গোষ্ঠী শুধু নিজের জেলাতেই নয় পুরুলিয়া ছাড়াও বাঁকুড়া,বর্ধমান,বীরভূম, উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগনা বিভিন্ন জেলা এবং জামশেদপুর , ধানবাদ, রাঁচি  বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছা সেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছে।  


২০২০ -২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতরের সংগঠন সাটসা  থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর পুরষ্কার জয় করে এই গোষ্ঠী।


এই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে রাজ্য স্তরে অনুষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনের প্রতিযোগিতায় মাননীয় কৃষিমন্ত্রী আশিস ব্যানার্জি, পূর্বাঞ্চলের সেরা সনির্ভর গোষ্ঠীর সন্মান তুলে দেন এই গোষ্ঠীর হাতে।বিগত দিনের কাজের নিরিখে  ২০২২ সালে ডিসেম্বরে প্রানী সম্পদ বিকাশ দফতরের তরফ থেকে বিশেষ সন্মান লাভ করেছে। 


বর্তমানে 'আমার মাতৃভূমি' পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ফার্ম রয়েছে। ক্রমেই এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকবল বেড়েছে, বর্তমানে এই গোষ্ঠীর সাথে তারাপদ দত্ত মঞ্জুরা মুদি ও সুন্দরা মাহাতো, এনাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতা আজ আমার মাতৃভূমিকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ২৭।  

এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্যোগে তরমুজ, কলা, ব্রকোলি, হলুদ ফুলকপি , বেগুনি বাঁধাকপি ইত্যাদি চাষেরর পাশাপাশি, কোয়েল পাখি , সিল্ক মুরগি, চিনা হাস, হোয়াইটপেকিন , কলোম্বিয়ান ব্রাক্ষ্মার মতো বিভিন্ন ধরনের ব্যতিক্রমী ও লুপ্তপ্রায় দ্রব্যের উদ্ভাবন করে চলেছে। ভবিষ্যতে আরো এমন ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনের লক্ষ্য রেখেছে এই গোষ্ঠী।  

সরকারের কাছে এই গোষ্ঠীর তরফ থেকে গ্রামের বেকার ছেলে মেয়েদের জন্য গবাদি পশু চাষের জন্য আরো বেশী সাহায্য দানের আবেদন করা হয়েছে। পুরুলিয়ার জলবায়ু ছাগল চাষের খুবই উপযোগি। সেই কারনে 'আমার মাতৃভূমি' সরকারের কাছে সরকারী সাহায্যের দ্বারা একটি বৃহৎ গোটফার্ম তৈরী করার প্রস্তাব রেখেছে ।এছাড়াও তারা যে সকল নতুন চিন্তাধারর উদ্ভাবনীমূলক সামগ্রী ও লুপ্তপ্রায় পশুপাখির চাষ ও সংরক্ষনের কাজ করছে তাকে শুধুই প্রদর্শনীর পর্যায়ে না রেখে বানিজ্যিক ভাবে প্রতিস্থাপনের স্বপ্ন রাখে এই গোষ্ঠী , সে কারনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন অযোধ্যা পাহাড় বা তার সংলগ্ন যদি যদি কিছুটা জমি মেলে তবে একটি পার্ক তৈরীর মাধ্যমে আমার মাতৃভূমি নিজেদের এই কর্ম কান্ডের স্বল্প সংস্করন পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে চায় , সাথে এই উৎপাদিৎ সামগ্রী আস্বাদনের ব্যবস্থা করতে চায়, যার দ্বারা এই অঞ্চলের বেকার ছেলেমেয়েরা স্বনির্ভর এবং স্বাবলম্বী হতে পারে।

You might also like!