Livelihood message

1 year ago

Inspirational , Sukh Muhammed dalal : মৌ পালনকে জীবিকা গ্রহন করতে চাইলে, পড়ুন সুখ মহম্মদ দালালের এই কর্মকান্ড

Honeybee harvesting
Honeybee harvesting

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ভারতবর্ষ কে যেমন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য বলে আখ্যা দেওয়া হয় , তেমন আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেও বহু বৈচিত্র্যের সমাহার দেখা  যায়। পাহাড়, নদী, জঙ্গল, মালভূমি , সমতলের মিশেলে বাংলা হয়ে উঠেছে সব থেকে ভিন্ন ও সমৃদ্ধ। যে রাজ্যে এতরকমের ভূমিরূপের সমাহার এক সঙ্গে রয়েছে সে রাজ্য যে প্রাকৃতিক রূপে সমৃদ্ধশালী হবে তাতে কোনো দ্বিমত নেই। বাংলার অর্থনৈতিক কাঠামোকে যে এই ভূ-বৈচিত্র্য অনাকাংশেই প্রভাবিত করবে সেটাই স্বাভাবিক। 

পশ্চিমবাংলা কৃষি প্রধান রাজ্য হলেও বাংলার কুটির শিল্প ও বাংলার অর্থনীতিকে বেশ জোড়ালো করে তুলেছে। উল্লেখ্য শুধু বাংলার কুটির শিল্পই নয় বাংলায় যে বৃহৎ বনভূমি রয়েছে তা থেকে ও বাংলার আয়ের পইরমান নেহাত ই কম নয়, বনাঞ্চলের কাঠ ও মধু সংগ্রহ থেকে বাংলার বেশ ভালই আয় হয়, যা বাংলার অর্থনৈতিক পরি কাঠামো কে আরো বলিষ্ঠ হতে সাহায্য করছে। 

দিনের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন ও জীবিকার ও পরিবর্তন এসেছে, কিছু বছর আগে পর্যন্ত ও  সকলের ধারনা ছিল মৌচাক বা মধু উৎপাদন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা তাতে মানুষের কোনো ভূমিকা নেই কিন্তু সেই ধারনা বদলে দিয়েছেন সুখ মোঃ দালাল। ওন্দার চিঙানি গ্রামের বাসিন্দা সুখ মহম্মদ দালালের বয়স যখন ১৭ বছর, তখনই মৌচাক ভেঙে মধু সংগ্রহের কাজে হাত পাকান। তবে মৌচাক ভাঙতে গিয়ে সারা শরীরে শতাধিক হুল ফুটেছে মৌমাছির। হুলের তীব্র জ্বালা দমাতে পারেনি তাঁকে । ফের ছুটে গিয়েছেন কোনও প্রাচীন গাছে থাকা মৌচাকের দিকে। অল্প-অল্প করে শতাধিক মৌমাছির কামড় সহ্য করেছেন। এখন তিনি প্রায় ৪০০ মৌমাছির হুলের জ্বালা সহ্য করতে পারবেন বলে প্রত্যয়ী। মধু সংগ্রহের নেশা পরে পেশায় বদলে গেছে । নিজের তাগিদে খুলে ফেলেছেন মাধু সংগ্রহের আস্ত একটি কোম্পানি। সেখানে আবার গ্রামেরই প্রায় ১৮ টি পরিবার কাজ পেয়েছে।  


তার এই প্রয়াস ও উদ্যোগ নজর এড়ায় নি প্রশাসনের, উৎকর্ষ বাংলার তরফে তিনি পরীক্ষকের কাজ পেয়েছেন। ইতিমধ্যে বাঁকুড়ার ছাতনা ও ঝাড়গ্রামে তিনি মৌমাছি পালনের পরীক্ষক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। মৌমাছি পালনের জন্য প্রশিক্ষণ হলেই তাঁর ডাক পড়ে বিভিন্ন জেলায়। তার আগে আবার মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন বিভিন্ন জেলায়। ভিন জেলায় গিয়ে সর্ষে, কালো জিরে, বাস ধনিয়া, লিচু, তিল প্রভৃতি গাছ থেকেও বক্সের  সাহায্যে মৌমাছি পালন করে তাঁর টিম।

প্রসঙ্গত, প্রকৃতিক মধু সংগ্রহ করায় যথেষ্ঠ ঝুঁকি থাকে । সাধারনত সুন্দরবনের গোসাবা, বাসন্তী ও ক্যানিং ব্লকের বাসিন্দারা মূলত জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে জীবনযাপন করেন, এদের মৌলি বলা হয়। নিজেদের অদ্ভুত প্রাণ শক্তি ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দরবনের ছোট ছোট খাঁড়ি এলাকায় নৌকা ভিড়িয়ে মৌচাক খুঁজে বের করে মধু সংগ্রহ করেন এনারা। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের অনুমতিপত্র নিয়েই সুন্দরবনের গহন অরণ্যে জন্য প্রবেশ করেন মৌলিরা মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত কথা বলেন না তাঁরা। নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন তাঁরা। মৌচাক খুঁজে পাওয়ার পর কাঁচা হেতাল গাছের পাতা দিয়ে মশাল জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন মৌলিরা। মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির কর বনদপ্তর। বর্তমানে এ কাজের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে গভীর  বনদফতরের পক্ষ থেকে প্রত্যেক  মৌলির  ১লক্ষ টাকা বিমা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, জঙ্গলে মাধু সংগ্রহের সময় বিশেষ নাজরদারি  চালাচ্ছেন বনকর্মীরা।  


সুখ মহম্মদের প্রসঙ্গে কথা বলতে হলে আরো একজন মানুষের কথা না বললে প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তিনি হলেন আনজার খান। পেশায় তিনি ও একজন সমাজবন্ধু। পুনিশোল এলাকার কয়েক'শ একর এলাকাজুড়ে চলে মিষ্টি কুমড়োর চাষ, এই চাষের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছেন আনজার খান।  

আমরা সবাই জানি যে মৌমাছি কেবল মধু উৎপাদন করে না পরাগ মিলনে ও সাহায্য করে মৌমাছি। প্রসঙ্গত, কুমড়ো ফুলের পরাগ রানী মৌমাছির ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ায় এবং মৌমাছির সংখ্যা বৃদ্ধি করে যা ভবিষ্যতে মধুর পরিমান বাড়াতে পারে। কিন্তু অতিমারির কারণে চাষের পরিমান হ্রাস হয় ফলে কৃত্তিম ভাবে পালত মৌমাছিদের খাবার যোগানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ক্রমেই আবাদি জমির পরিমান হ্রাস ও কংক্রিটের ভিড় বাড়তে থাকায় ফলনে ও ঘাটতি পড়ছিল,এমন পরিস্থিতিতে সুখ মহম্মদ দালাল ও আনজার খান একত্রে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। পুনিশোল এলাকার কুমড়ো ক্ষেতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এই উদ্যোগ সফল ও হয়,কুমড়ো চাষী আনজার খান অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানান যে কুমড়ো ক্ষেতে মৌমাছির চাষ শুরু হওয়ার পর মাঠে কুমড়ো ফুলগুলো ফল দিতে শুরু করেছে।  


কুমড়ো ক্ষেতে কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি প্রতিফলনের ফলে কুমড়োর ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি মধু চাষে ও গতি এসেছে, সাথে মৌমাছির বংশ বৃদ্ধির ফলে ভবিষ্যতে আরো বেশি পরিমান মধু উৎপাদন সম্ভব হবে, সাথে পরিবেশের ভারসাম্য ও রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

You might also like!