দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ডিনারে কি দেদার মাছ-মাংস-ডিম খাওয়ার অভ্যাস? তা হলে সেটা ত্যাগ করাই ভালো। তার জায়গায় পাতে রাখুন তরি-তরকারি, ডাল। সাম্প্রতিক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। ওই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভালো ঘুমের স্বার্থে রাতে আমিষ খাবারের চেয়ে নিরামিষ খাওয়াই ভালো।
আরও ভালো করে বলতে গেলে, অ্যানিম্যাল প্রোটিন খাওয়ার চেয়ে প্ল্যান্ট প্রোটিন খেলে তুলনায় ঘুম ভালো হয়। আয়ারল্যান্ড ও ইউএসএ-র দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। বিখ্যাত ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’ বিজ্ঞানপত্রিকায় সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
ডাবলিন ও বস্টনের দু’টি ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ইনস্টিটিউটের পাঁচ গবেষক ইউএসএ-র তিনটি সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সঙ্গে ঘুমের মানের সম্পর্ক রয়েছে। নার্সেস হেলথ স্টাডি-১ ও ২ এবং হেলথ প্রফেশনালস ফলো-আপ স্টাডিতে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৯৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের (৮৩ হাজার মহিলা ও ১৫ হাজার পুরুষ) স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে।
তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্যাভ্যাস, বিশেষত রাতের খাবার এবং ঘুমের অভিজ্ঞতায়। ১৩০ রকমের খাবার বিশ্লেষণ করার পর সেখান থেকেই দেখা গিয়েছে, সারা দিনে কতটা প্রোটিন খাওয়া হচ্ছে, তার উপর ঘুমের মান নির্ভর করে না। কিন্তু প্ল্যান্ট (উদ্ভিজ্জ) না অ্যানিম্যাল (প্রাণীজ)— কোন ধরনের প্রোটিন খাওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে রয়েছে ঘুমের গুণগত সম্পর্ক। গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ভালো ঘুমের জন্য প্ল্যান্ট প্রোটিনই শ্রেয়।
কেন এমন ফলাফল, গবেষণাপত্রটি পড়ে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ঘুম তথা ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ হালদার এবং ঘুম তথা ইএনটি বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর দত্ত। তাঁরা বলেন, ‘ঘুমের সহায়ক হরমোন হল মেলাটোনিন। হরমোনটি তৈরি হয় ট্রিপটোফান নামের রাসায়নিক থেকে। এই ট্রিপটোফানের উৎস প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এখন মস্তিষ্কে এই ট্রিপটোফানের শোষণ বিঘ্নিত হয় যখন অ্যানিমাল প্রোটিন খাওয়া হয়। কেননা, তাতে আরও অনেক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে যা ট্রিপটোফানকে বাধা দেয়। কিন্তু প্ল্যান্ট প্রোটিনে অন্যান্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চেয়ে ট্রিপটোফানের পরিমাণ বেশি। তাই সহজেই তা মস্তিষ্কে ঢুকে মেলাটোনিন তৈরি করতে পারে বেশি মাত্রায়। আখেরে তাতে ঘুম ভালো হয়।’
আর এক স্লিপ মেডিসিন স্পেশ্যালিস্ট সৌরভ দাস মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অ্যানিম্যাল প্রোটিনের মধ্যেও আবার ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু রেড মিট। যেমন পাঁঠা, খাসি, শুয়োর বা গোরুর মাংস। তা ছাড়া রয়েছে, রাতে এ সব খাবার হজম করতে না পারার সমস্যাও। তুলনায় দুগ্ধজাত প্রোটিন কিংবা মুরগির মাংসের মতো লিন মিটে সেই সমস্যা হয় না। তাদের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক প্রায় প্ল্যান্ট প্রোটিনেরই কাছাকাছি।