কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারি : আমাদের দেশের অনেক মানুষেরই ধারণা, ইংরেজরা আসার আগে আমাদের দেশে নাট্যচর্চা হত না। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত 'ওল্ড প্লে হাউস' অথবা 'দ্য বেঙ্গলি থিয়েটার'ই হল ভারতের প্রথম নাট্যশালা। কিন্তু তারা এই ইতিহাস ভুলে গেছে অথবা কৌশলে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ভারতে প্রথম নাট্যচর্চা শুরু হয় এখন থেকে আনুমানিক ২,৪০০ বছর আগে। আর নান্দনিক শিল্পের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল নাট্যশাস্ত্রের রচনা, যা ভরতমুনি রচনা করেন। একে যোগশাস্ত্র, নাট্যবেদ বা পঞ্চমবেদও বলা হয়। এই ভারতীয় নাট্যধারার জনক ভরত মুনিই প্রাচীন ভারতীয় নাটক, বিশেষ করে সংস্কৃত মঞ্চ নাটক ও অভিনয় বিদ্যা বিষয়ক নাট্যশাস্ত্র রচনা করেন। মাঘ মাসের শুভ মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে ভরতমুনি জন্মগ্রহণ করেন। এই তিথি ধরেই হাজার হাজার বছর ধরে ভরতমুনি জয়ন্তী পালিত হয়ে আসছে ভারতে। 'সংস্কার ভারতী'র অবশ্য পালনীয় দু'টি উৎসবের মধ্যে অন্যতম হল ভরতমুনি স্মরণ জয়ন্তী পালন।
বুধবার সারা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও 'সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের ১১টি জেলায় পালিত হয় ভরতমুনি স্মরণ জয়ন্তী। বিভিন্ন নাট্যদলের সাথে যৌথ উদ্যোগে পালিত হয় এই জয়ন্তী। সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ-এর প্রতিটি জেলা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ভরতমুনি স্মরণ জয়ন্তী পালন করা হয় সঙ্গীত, ভরতমুনির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, নাটকের গান ও ভরতমুনি রচিত নাট্যশাস্ত্র বিষয়ে আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে।
রাজ্যব্যাপী ভরতমুনি জয়ন্তী পালন করা প্রসঙ্গে "সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ (দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)'-এর সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, আজকাল মানুষ সিনেমা বা সিরিয়ালের প্রতি বিশেষভাবে আকর্ষিত হলেও ভারতীয় সংস্কৃতিতে নান্দনিকতা বা বিনোদনের জন্য অন্যতম স্থান ছিল নাটক। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব নাটক সম্পর্কে বলেছেন -'নাটকে লোকশিক্ষে হয়'। ভারতে নাট্যচর্চা হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় ২৪০০ বছর ধরে। ইংরেজরা আমাদের দেশে আসার আগেও নাটক ভীষণ জনপ্রিয় ছিল ও শিক্ষার আধার হিসেবে বিবেচিত হত। বর্তমানে পুনরায় ভারতীয় সংস্কৃতির পুনরুত্থান ও নাট্য শিল্পকে জনপ্রিয় করার জন্য এহেন উদ্যোগ এসেছে। ভরতমুনি জয়ন্তী পালনের মাধ্যমে সংস্কার ভারতী সরকারের সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নাট্যশিল্পকে পুনরায় জনপ্রিয় করে তুলতে চায়।"