দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।এমন সময় এই প্রস্তাবের বিষয়টি সামনে এসেছে, যখন ৩০টি দেশের সামরিক প্রধানেরা গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে মিলিত হন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সুরক্ষা দিতে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে তাঁদের আলোচনা করার কথা।
আগের দিন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ফোনে কথা বলেন। এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবস্থা ও অবকাঠামোয় হামলা বন্ধে প্রস্তুত কিয়েভ। আগের দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইউক্রেনে একই ধরনের হামলা না চালানোর বিষয়ে সম্মতির কথা জানান।পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। জাপোরিঝঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কথা বলেছি। আর সেটা এখন রাশিয়ার দখলে রয়েছে।’ ফিনল্যান্ড সফররত জেলেনস্কি ভার্চ্যুয়াল এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।ফোনালাপের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়াকে ছাড় দিতে ট্রাম্পের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাপ আছে বলে তিনি মনে করেননি।
তবে বিস্তৃত পরিসরে যুদ্ধবিরতি এখনো অধরা বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক সহযোগিতা বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন পুতিন।যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশও সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে ঠিক কতগুলো দেশ আগ্রহী, তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাজ্যের সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার কথা স্টারমার ও মাখোঁর। ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের অংশ হিসেবে একটি জোট গড়ার চেষ্টা করছেন দুই নেতা। ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরুর পর তৎপর হন স্টারমার ও মাখোঁ।
এমন সময় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনে পশ্চিমা সহায়তা বন্ধের শর্ত দিয়েছেন পুতিন। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের মাটিতে বিদেশি সেনার উপস্থিতিও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপের পর বুধবার ট্রাম্পের মনোভাব অনেকটা ইতিবাচক মনে হয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, দুজনের মধ্যে ‘চমৎকার’ আলাপ হয়েছে। যদিও সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে দুজনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এগুলো পরিচালনায় ওয়াশিংটন ‘খুবই সহায়ক’ ভূমিকা রাখতে পারে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমেরিকার মালিকানা, সেসব স্থাপনাকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে পারে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপ থেকে কিয়েভ যাতে আরও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পায়, সে সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, পূর্ণ একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ‘একেবারে ঠিক পথেই এগোচ্ছে’।
জেলেনস্কি আরও জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্য সৌদি আরবে বৈঠকে বসতে পারেন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। আগামী সপ্তাহের শুরুতে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদেরও বৈঠক করার কথা রয়েছে।