দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সনাতনী নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপির নেতৃবর্গ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তৃতা পেশ করেছেন প্ৰাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বক্তৃতা প্রদানকালে তারেক রহমান হিন্দুদের উদ্দেশ্যে এই অভয়বার্তা দিয়েছেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ভোটের বিকল্প নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, যতদিন পর্যন্ত দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত কোনও নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়। গুলশানে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে হিন্দুদের বিভিন্ন ধৰ্মীয় সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে কয়েকশো মানুষ অংশগ্ৰহণ করেছিলেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের বহু শোনে বিভিন্ন বিষয় সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনও বিপদমুক্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনও অপশক্তি যাতে আবার গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং সাফল্যের ধারাকে ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক থাকতে হবে। দেশ-বিদেশের সর্বস্তরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় পরিচয়ে বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্ৰিষ্টান, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এমন কোনও জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিল না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এ-সব নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। আমরা এ দেশের নাগরিক।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এজন্য ভারত থেকে দলে দলে সাংবাদিকরা এসেছিলেন। সবাইকে একটা কথা বলেছি, এই পরিবর্তনের (ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান) ফলে যা ঘটেছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক। কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। আজ আবার একই চক্রান্ত শুরু হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যাবে না। একইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, এটা কিন্তু আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরের পৌরোহিত্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতৃবর্গ এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রায় কয়েক শতাধিক পদাধিকারী ও সাধারণ কর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দুর্গাপূজার উৎসব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে, এটাই বিএনপির নীতি, রাজনীতি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসেই আপনাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আপনারা প্রত্যেকে উৎসব উদযাপন করুন নিশ্চিন্তে, নির্ভয়ে, নিরাপদে।’
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দে-র যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায়চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণের চেয়ারম্যান বিজনকান্তি সরকার, ফেনীর কামাখ্যা চন্দ, খাগড়াছড়ির অজয় সেনগুপ্ত, সাভারের উত্তম ঘোষ, খুলনার সুজনা জলি, বরিশালের সঞ্জয় গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেনগুপ্ত, গৌড় সিনহা প্রমুখ বক্তব্য পেশ করেছেন।
ইসকন-এর চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্তকুমার দেব, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, গুলশান পূজা কমিটির জেএল ভৌমিক, পান্নালাল দত্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেনগুপ্ত, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নির্মল রোজারিও, হিন্দু মহাজোটের সুশান্তকুমার চক্রবর্তীও বক্তব্য পেশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত-উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্তকুমার কুণ্ডু, আবদুল বারী ড্যানি, অপর্ণা রায়, রমেশ দত্ত, দেবাশিস রায় মধু, সুশীল বড়ুয়া, জনগোমেজ, মিল্টন বৈদ্য সহ কেন্দ্রীয় এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতৃবর্গ এবং গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।