দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি ব্লকে আনন্দধারা প্রকল্পের সার্কেল রিসোর্স পার্সন নিয়োগ নিয়ে তীব্র দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝেই এ ঘটনায় স্বনির্ভরতা প্রকল্পের আড়ালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসংখ্য অনিয়মের আভাস পাওয়া গেছে। মহিলা চাকরি প্রার্থীরা একাত্ম হয়ে সরব হয়েছেন, অভিযোগ করেছেন নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক গড়মিল, আর ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে অনেক প্রতিযোগীকে। হলদিবাড়ি বিডিও অফিসে ইতিমধ্যেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
চলতি মাসেই আনন্দধারা প্রকল্পের সার্কেল রিসোর্স পার্সন পদে ৬টি শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে হলদিবাড়ি ব্লকে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বিডিওর তত্ত্বাবধানে। পরীক্ষা সফলভাবে উত্তীর্ণ হন মোট ৩২ জন প্রার্থী। এরপর ১০ জুন কোচবিহারের মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের আরটিসি বিল্ডিংয়ে ইন্টারভিউ অনুষ্ঠিত হয়। এক মাসের ব্যবধানে, ১ সেপ্টেম্বর আনন্দধারা প্রকল্পের জেলা মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট ১৬ জনের মেধাতালিকা প্রকাশ করে। তালিকার প্রথম ৬ জনকে প্রথমে নিয়োগ দেওয়া হবে, বাকি ১০ জন ওয়েটিং লিস্টে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নতুন বিতর্ক। লিখিত পরীক্ষার নম্বর বা ইন্টারভিউয়ের স্কোর কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এতে প্রার্থীরা বিভ্রান্ত ও হতাশ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল, মেধাতালিকার রোল নম্বর ও প্রার্থীদের নামের মধ্যে স্পষ্ট গড়মিল। একই রোল নম্বর দিয়ে একদিকে এক নাম, আবার অন্যদিকে ভিন্ন নাম প্রদর্শিত হয়েছে।
এক নজরে তালিকায় দেখা যায়, তালিকার শীর্ষে থাকা প্রার্থী রোল নম্বর CRP-EP/HDB/059। এ রোল নম্বরটি সাবিনা প্রামাণিকের। কিন্তু তালিকায় এই রোল নম্বরের পাশে নাম লেখা রয়েছে অপর্ণা রায়ের। আবার, রোল নম্বর CRP-EP/HDB/024 যা দীপালি রায়ের অ্যাডমিট কার্ড নম্বর, মেধাতালিকায় রয়েছে সাবিনা ইয়াসমিন সরকারের নাম। এসব গড়মিল নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে পৌঁছেছে। মেধাতালিকায় গড়মিল এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে হলদিবাড়ি এলাকার মহিলা প্রার্থীরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ক্যামেরার সামনে। প্রথমে তারা পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ জানান, কিন্তু পুলিশ থেকে কোনো সমাধান পাননি। এরপর হলদিবাড়ি বিডিও অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং অভিযোগের রিসিভ কপি হাতে পান। তাদের দাবি, স্বচ্ছ ও ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো না হলে তাঁদের স্বপ্ন ও স্বনির্ভরতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আশা করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই দুর্নীতির হোতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হলদিবাড়ি বিডিও রেঞ্জি লামো শেরপার সঙ্গে যোগাযোগের বহুবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি এবং কোন উত্তরও প্রদান করেননি।
আনন্দ ধারা প্রকল্প আসলে কী? রিসোর্স পার্সনদের কাজটাই বা কী?
আনন্দধারা প্রকল্প মূলত রাজ্যের মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করে তাদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনে উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের জীবনমান উন্নত করা। এই প্রকল্পে নিয়োজিত রিসোর্স পার্সনদের কাজ হল, গ্রামের মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, গোষ্ঠী গঠন ও সঠিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করা। তারা সরাসরি গ্রামের মহিলাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সক্ষম করে তোলেন।