দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ভাঙড় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে। এর পরেই ভয়ে আছেন এলাকার নেতারা। তাতে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই আছে। এ বারে কোন নেতার পালা? তা নিয়েও চর্চা রাজনৈতিক মহলে। যেভাবে প্রতেকটি থানা গুন্ডাদের তালিকা তৈরি করে ধরপাকড়ের নির্দেশ পেয়েছে, গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় দিন গুনছে শাসক-বিরোধী নেতারা।
কথায় বলে বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা আর পুলিশ ছুঁলে...। পুলিশ ছুঁলে কত ঘা হতে পারে সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সম্যক আন্দাজ করতে পারছে ভাঙড়। ভাঙড়ের কলকাতা পুলিশে অন্তর্ভুক্তির একমাস পূর্তির দিনেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে। আরাবুলের গ্রেপ্তারের পরেই ভয়ে আছেন নেতারা। তাতে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই আছে।
আরাবুলের পর এ বার কোন নেতার পালা তা নিয়েও জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ভয় ধরেছে ভাঙড়ের গুন্ডা, বদমাশ বা সমাজবিরোধীদের মনেও। কারণ যেভাবে প্রতেকটি থানা গুন্ডাদের তালিকা তৈরি করেছে এবং ধরপাকড়ের নির্দেশ পেয়েছে উপরতলা থেকে তাতে, যে কোন সময় গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছে শাসক-বিরোধী সবপক্ষের সমাজবিরোধীরা।
সূত্রের খবর, গ্রেপ্তারের ভয়েই থানায় আসা যাওয়া কমেছে নেতাদের। তিনি শাসক কিংবা বিরোধী যে দলেরই হোন না কেন পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে কেউই থানামুখো হচ্ছেন না। উত্তর কাশীপুর থানার বাইরে এক চায়ের দোকানদার বললেন, ‘আগে সবসময় নেতাদের ভিড় লেগে থাকত থানায়। কোনও না কোনও বিষয়ে নেতারা থানায় আসতেন। বড়বাবু-মেজবাবুদের সঙ্গে কথা বলতেন। এখন কারও দেখা নেই। আরাবুল ইসসাম গ্রেপ্তারের পরে সবাই থানায় আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন।’
এমনকী সন্ধের পর দলীয় কার্যালয় বা দোকানে বসেও আড্ডা দিচ্ছেন না ভাঙড়ের অধিকাংশ নেতা। ভাঙড়ের হাতিশালা এলাকায় শাসক দলের চারটি দলীয় কার্যালয়। সন্ধের পর সেখানে নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগেই থাকত। মঙ্গলবার দেখা গেল দু’টি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। ভাঙড়ের বাসিন্দা রেজাউল শেখ বলেন, ‘আগে সন্ধে হলেই ভাঙড়ের নেতারা নিউ টাউনের বিভিন্ন মলে গিয়ে বসে আড্ডা দিতেন, চা খেতেন। আরাবুল ইসলামের গ্রেপ্তারের পর আর কেউ সন্ধের পর নিউ টাউনের দিকেও যাচ্ছেন না।’
ভাঙড়ের ভগবানপুর অঞ্চলের এক নেতাকেও নিউ টাউনে দেখা যেত সন্ধের পর আড্ডা দিতে। ওই নেতাই এখন বিকেলের পর ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন বলে তাঁর অনুগামীরা জানিয়েছেন। আরাবুল ঘনিষ্ঠ ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষকেও ক’দিন ধরে বাজারহাটে দেখা যাচ্ছেনা। তিনি কোথায় ‘আন্ডরগ্রাউন্ড’ হলেন কেউ বলতে পারছেন না।
তবে শুধু আরাবুল শিবির নয়, তৃণমূলে আরাবুল বিরোধী শিবির ও আইএসএফ নেতারও যথেষ্ট আতঙ্কে আছেন বলে খবর। ইতিমধ্যেই তৃণমূলে আরাবুল-বিরোধী শিবিরের নেতাদের সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার অফিসাররা। একই বার্তা দেওয়া হয়েছে আইএসএফ নেতাকর্মীদেরও। কোনও রকম বেচাল দেখলেই পুলিশ কাউকে রেয়াত করবে না সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার একমাত্র আইএসএফ জেলা পরিষদ সদস্য তথা ভাঙড়-২ ব্লকের আইএসএফ সভাপতি রাইনূর হক বলেন, ‘তৃণমূল নেতারা সবসময় পুলিশ-প্রশাসনের মদতে এলাকায় গুন্ডামি, মস্তানি করে বেড়ায়। পুলিশ বড় নেতাকে জালে তুলতেই বাকি সবাই ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছে।’ এ নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শওকত মোল্লা বলেন, ‘থানায় গিয়ে নেতাদের কাজ কী? আমাদের নেতারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মাঠে ময়দানেই আছে।’