দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ভোট-যুদ্ধের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্তিনে ছিল লক্ষ্মী-ভাণ্ডার প্রকল্প। মোকাবিলায় বিজেপির হাতে কী ছিল? লোকসভা ভোটে একগুচ্ছ আসন খুইয়ে বাংলার পদ্ম নেতাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, নানারকম বিভ্রান্তিমূলক প্রচার ছাড়া সেরকম কিছুই ছিল না, যা দিয়ে তৃণমূলের লক্ষ্মী-ভাণ্ডার অস্ত্র ভোঁতা করা যায়।
২০২১-এ ভোটে জিতে লক্ষ্মী-ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে প্রকল্পের টাকা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে মাসিক ১০০০ করে দেন মমতা। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের সুবিধা পায় বাংলায় ২ কোটি ১৫ লক্ষেরও বেশি মহিলা। প্রত্যাশিত ভাবেই ভোট-প্রচারে তৃণমূল নেতৃত্ব হাতিয়ার করেন লক্ষ্মী-ভাণ্ডারকে।
তৃণমূল যখন এই প্রকল্পের সাফল্য ঢাক পিটিয়ে প্রচার করছে, তখন বিজেপির দিক থেকে লক্ষ্মী-ভাণ্ডার নিয়ে ভেসে এসেছে শুধুই কটাক্ষ। কোচবিহারের বিজেপি নেত্রী দীপা চক্রবর্তীকে এ কথাও বলতে শোনা যায়, তিন মাস পরই লক্ষ্মী ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাবে- যা তৃণমূলের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দেয়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর প্রায় সব সভা থেকেই সে কথা উল্লেখ করে বিজেপিকে আক্রমণ করা শুরু করেন।
বিজেপি মনে করছে, এর প্রভাব ভোটবাক্সে পড়েছে। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, 'লক্ষ্মী-ভাণ্ডার প্রকল্পের কারণে রাজ্যের মানুষ ঢেলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে, এ কথা আমরা মনে করি না। কিন্তু আমাদের কোচবিহারের এক নেত্রীর বক্তব্যকে সম্বল করে তৃণমূল প্রচার শুরু করে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মী ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। এর প্রভাব পড়েছে। কিছু মানুষ সেটা বিশ্বাস করেছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই আমরা সর্বত্র তৃণমূলের সেই প্রচারের মোকাবিলা করতে পারিনি।'
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লক্ষ্মী-ভাণ্ডার প্রকল্প যে বিজেপির বিড়ম্বনা বাড়াবে, তা প্রথমে কিছুটা আঁচ করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি নির্বাচনী সভা থেকে প্রতিশ্রুতি দেন, বিজেপি বঙ্গে ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মী ভাণ্ডারের ভাতা বাড়িয়ে দু'হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এরপরই শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মী ভাণ্ডারে অর্থের পরিমাণ তিন হাজার টাকা হবে।
এ পর্যন্ত তা-ও ঠিক ছিল। এর পর বাংলায় ভোটে প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর প্রতিশ্রুতি ছিল, 'বিজেপি ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মী ভাণ্ডারের ভাতা একশো টাকা করে বাড়ানো হবে!'- যা শুনে রাজ্যের বহু মানুষের মতো চমকে ওঠেন বাংলার বিজেপি নেতারাও। ভোটের মরশুমে বিভ্রান্তি ছড়ায়, লক্ষ্মী ভাণ্ডারের পরিণতি ঠিক কী হবে? সুকান্তর কথামতো দু'হাজার টাকা? শুভেন্দুর প্রতিশ্রুতি মেনে তিন হাজার? শাহের আশ্বাসে ১০০ টাকা বাড়বে? নাকি কোচবিহারের ওই বিজেপি নেত্রীর হুঁশিয়ারিই সত্যি হবে!
বঙ্গ-বিজেপির একাংশের উপলব্ধি, লক্ষ্মী-ভাণ্ডার সংক্রান্ত এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারগুলিই তৃণমূলের মহিলা ভোটব্যাঙ্ক আরও অটুট করেছে। বুধবারই বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ রাজ্য সরকারের লক্ষ্মী-ভাণ্ডার প্রকল্পকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়ে বলেন, 'লক্ষ্মী-ভাণ্ডার একশো শতাংশ এফেক্ট করেছে এ বারের ভোটে। আমাদের দলের কর্মীদের স্ত্রীও লক্ষ্মী ভাণ্ডারের জন্য তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।'