West Bengal

7 months ago

Sheikh Shahjahan: বালুর চিঠি থেকে ইডি-নজরে বাংলার 'বাঘ' শাহজাহান !

Sheikh Shahjahan (File Picture)
Sheikh Shahjahan (File Picture)

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ এসএসকেএমের বেডে শুয়ে মেয়েকে একটা চিরকুট লিখেছিলেন রেশন দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখানে লেখা ছিল, ‘টাকার প্রয়োজন হলে ডাকু(শঙ্কর আঢ্য), শাহজাহান এবং রবিন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’ সেই চিরকুট বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরেই প্রথমবার কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে পড়েন সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান।

৫ জানুয়ারি সাতসকালে তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে রক্তাক্ত হন ইডির গোয়েন্দারা। রাতারাতি খবরের শিরোনামে উঠে আসেন সরবেড়িয়ার তৃণমূল নেতা। গোয়েন্দাদের কাজে বাধা এবং পেটানোর অভিযোগে কেন্দ্রীয় এজেন্সি এবং পুলিশ যখন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে, তখনই গোপন ডেরা থেকে অডিয়ো বার্তায় শাহজাহান অনুগামীদের জানিয়ে দেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। ইডি চক্রান্ত করছে।’

এপর্যন্ত তাও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। আদালতে ‘প্রাক্তন সিপিএম’ নেতাকে গ্রেপ্তারের জন্য শুরু হয়েছিল পুলিশ-ইডির আইনি লড়াই। কিন্তু পুরো ঘটনা ঘুরে যায় ৩১ জানুয়ারি দুপুরে। এলাকার বাঘ গা ঢাকা দিতেই সংঘবদ্ধ হওয়া শুরু করেন এলাকাবাসী। বিশেষ করে সন্দেশখালি-২ ব্লকের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় চাষের জমি দখল করে ভেড়ি তৈরির কারবার শুরু করেছিলেন শাহজাহানের দুই সাগরেদ শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দার।

পাঁচ তারিখ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার দাবিতে পাল্টা মিছিলের ডাক দেন উত্তম-শিবুরাও। সন্দেশখালি-১ ব্লকের জেলিয়াখালি থেকে হাজার দেড়েক লোক এনে পুরো এলাকা পরিক্রমা করানো হয়। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে, যাঁরা স্লুইস গেটে তালা দিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এলাকার চাষি মিলন মাইতির অভিযোগ, ‘মাস ছয়েক আগে শাহজাহান এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কোনও চিন্তা নেই, জল কর(জমির ভাড়া) পেয়ে যাবেন। কিন্তু তা তো পাইনি, উল্টে এবারেও ওরা জমি নিয়ে নিয়েছিল।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ৫ তারিখ জেলিয়াখালি থেকে লোক আনায় এখানে যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে আমরা তা সকলে বুঝে যান। বিপদ বুঝতে পেরে বিকেল বেলায় ঘর থেকে মা-বোনেরাও বেরিয়ে এসে ওদের তাড়া করতেই ভয় পেয়ে ওপারের ভাড়া করা লোকেরা ঘাটে গিয়ে জমায়েত হয়। সেখানেও আমরা ওদের লক্ষ্য করে কোল্ড ড্রিংসের বোতল ছুড়তে শুরু করলে ওরা কোনওক্রমে একটি ভুটভুটিতে চেপে পালিয়ে যায়।

এরপর রাগের চোটে সাধারণ মানুষ শিবু এবং উত্তমের আলা ঘর(বিশ্রামের জায়গা) সহ একাধিক ঠেকে হানা দিয়ে ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতিও চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এলাকার লোকেদের বক্তব্য, ১৯৯৯ সালে ট্রেকার চালক হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন শাহজাহান। সে সময়ে সরবেড়িয়া অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন তাঁর দাদু মোসলেম শেখ। ২০০৬ সাল থেকে মোসলেমের সহকারী হয়ে ওঠেন তিনি।

এক সময়ে নাতিকে এলাকার ইট ভাটা ও ভেড়ি থেকে তোলা আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে দেন মোসলেম। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র হাতছাড়া হলেও সরবেড়িয়া পঞ্চায়েত থেকে যায় বামেদের দখলে। এমনকী, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দাপটের মধ্যেও সন্দেশখালি অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখে দেয় বামেরা। সেটাও শাহজাহানের দৌলতে।

পরে ২০১৩ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৭ সালে দাদুকেও নিয়ে আসেন নিজের দলে। তারপর থেকে সন্দেশখালির একচ্ছত্র দখল চলে যায় শাহজাহানের কব্জায়। নিজের নামে বাজার, খেলার মাঠের নামকরণও করে ফেলেন শাসকদলের প্রভাবশালী নেতা। আর সেই উচ্চাকাঙ্খা আর বাড়াবাড়ির সৌজন্যেই মসিহা থেকে ভিলেন হয়ে যান শেখ শাহজাহান।

You might also like!