দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বর্তমান ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত নেতারহাট শব্দের উৎস সম্পর্কে দুটি মত পাওয়া যায়।কেউ কেউ বলেন জনৈক ইংরেজ এখানে এসে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন,বিউটি অফ 'নেচার'।সেই নেচার থেকেই 'নেতার' ও পরে তৎসম শব্দ 'হাট' যুক্ত হয়ে 'নেতারহাট' হয়েছে।তবে দ্বিতীয় মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য।ওই অঞ্চলের আদিবাসীদের আঞ্চলিক শব্দ 'নেতা' মানে বাঁশ'।অর্থাৎ একসময় এখানে প্রচুর বাঁশবন ছিল।তাই নাম হয়েছে 'নেতারহাট'।কিন্তু নামে কি আসে যায়।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,'গোলাপকে যে নামই ডাকো, তা সুন্দর।'
নেতারহাটও ঠিক তাই।সারা পৃথিবী ঘুরে নেতারহাটের প্রাকৃতিক রূপ খুঁজে পাওয়া যাবে না।নেতারহাটের উচ্চতা ১০৭১ মিটার । পাহাড়ের পর পাহাড় পেরিয়ে নেতারহাটে পৌঁছে গেলে আর বোঝা যায় না যে প্রায় কালিম্পংয়ের উচ্চতায় ছোটনাগপুরের এই হিল স্টেশনটা। এটা আসলে একটা বড়োসড়ো ভ্যালির মত। পাহাড়ী জায়গায় যেরকম চড়াই উৎরাই থাকে, সেরকম কম। নেতারহাটের একটা স্পেশাল ব্যাপার হল সানরাইজ ও সানসেট দুটোই দেখা যায়। প্রকৃতির একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যেখান থেকে সূর্যোদয় দেখা যায় সেখান থেকে সাধারণত সূর্যাস্ত দেখা যায় না।কিন্তু নেতারহাট ব্যতিক্রম।এটাই নেতারহাটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
যেভাবেই যান না কেন নেতারহাট পৌঁছাতে বেলা ১২ টা হবেই।তাই দুপুরের খাবার সেরে বেরিয়ে পড়ুন রাস্তায়।
ঘুরে আসুন নেতারহাট থেকে ১০কিমি দুরে অবস্থিত ম্যাগনোলিয়া পয়েন্ট। সানসেটও দেখে নিন তার সাথে। সেখান থেকে ছোটনাগপুর মালভূমির অনেকটা অংশ বেশ ভাল ভাবে দেখা যায়। তার ২কিমি দূরে রয়েছে কোয়েল ভিউ পয়েন্ট। অপূর্ব সুন্দর নিস্তব্ধ এক জায়গা। এর নীচ দিয়ে বয়ে গেছে কোয়েল নদী যা বয়ে গেছে পালামো টাইগার রিজার্ভের ভেতর দিয়ে। কোয়েলভিউ পয়েন্ট সংলগ্ন রয়েছে পাইন বন। এছাড়া এর আশে পাশে রয়েছে আপার ঘাঘরি এবং লোয়ার ঘাঘরি জলপ্রপাত। এছাড়াও আছে নেতারহাট ড্যাম, ট্যাহার, বানারি, লোধ জলপ্রপাত প্রভৃতি জায়গা।এক নিমেষে মন জয় করে নেবে ওইসব অনুপম স্থান।মনেহবে ওখানেই চিরকালের জন্য থেকে যাই।
ওখান থেকে ৬০ কিমি দূরে আছে পৃথিবীর বিস্ময় লোড জলপ্রপাত।এটি ঝাড়খণ্ডের উচ্চতম জলপ্রপাত। ছোট নাগপুর মালভূমির এক পাহাড়িয়া নদী বুঢ়া প্রায় ৪৬০ ফিট উপর থেকে নীচে লাফিয়ে এই সুন্দর জলপ্রপাতটির সৃষ্টি করেছে। নেতারহাট থেকে প্রায় ৬০ কিমি দূরে লোধ। আকাবাঁকা পাহাড়ি পথে একসময় লোধ এর কাছে পৌছাবেন, তবে প্রায় ১ কিমি আগে গাড়ি রাস্তা শেষ হবে তাই বাকী পথটা হেঁটেই যেতে হবে। সিঁড়ি রয়েছে। একটা অদ্ভুত গা ছমছমে আরণ্যক পরিবেশ মনকে নাড়া দেয়।এই পথটা একটু কঠিন।বয়স্ক মানুষ ও বাচ্চাদের নিয়ে না যাওয়ায় ভালো।কিন্তু এই জলপ্রপাত দেখলে মনে হবে,এখানে না আসলে ব্যর্থ হত জীবন।
তবে একটা ঘটনা হলো,ঠিক পুজোর সময় বা তার পরে নেতারহাট যাওয়ার আদর্শ সময়।তখন ঝর্নাগুলো উচ্ছল যুবতীর মতো খেলা করে।
যাওয়া - যে পথ দিয়েই হোক আপনাকে আগে যেতে হবে রাঁচি স্টেশন।তারপর বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে ঘন্টা চারেকের মধ্যে প্রকৃতির রানি নেতারহাট।রাঁচি থেকে দূরত্ব ১৩০ কিমি।
থাকা খাওয়া -
নেতারহাট একাধিক থাকার জায়গা থাকলেই অন্যতম হলো 'ফরেস্ট বাংলো'(09431760110)।প্রত্যেক ঘর থেকে সানরাইজ দেখা যায়।আর আছে ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজমের 'প্রভাত বিহার হোটেল' । ভাড়া ১৩০০ টাকা। ট্যাক্স নিয়ে ১৪৫৬ টাকা। অনলাইন বুকিং হয়। এছাড়া আরও কিছু হোটেল আছে। 'হোটেল রবিশশী' একটা অন্যতম ভালো হোটেল (09934769927)।এছাড়াও প্রভাত বিহারের পাশে ঝাড়খণ্ড সরকারের আর একটি হোটেল আছে। সেটি লিজ নিয়ে চালায় একটি প্রাইভেট সংস্থা। ভাড়া শুরু ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
নেতারহাটের গাড়ি বুকিংয়ের জন্য ফোন করুন - সুনীল -91-9798171704) অথবা ধনেশ্বর ( 91-7323080858)
সতর্ক বার্তা -
১) সন্ধ্যার পরে ঘর থেকে বেরোনো উচিত না।প্রচুর পশুর আনাগোনা শুরু হয়।
২)BSNL ছড়া অন্য টাওয়ার না পাওয়ার সম্ভাবনা।
৩) সঙ্গে ক্যাশ টাকা নিন।একটা ATM থাকলেও বেশিরভাগ সময় টাকা থাকে না।
তাহলে জঙ্গল, পাহাড় , ঝরনার রানি নেতারহাট চলুন কয়েকদিনের জন্য।