দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ছোটবেলায় হিন্দি ছবিতে নায়ক-নায়িকাদের ফুলের বাগানের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়াতে দেখা যেত। চার পাশে ফুলে ফুলে ভরা। আর এতটা বড় এলাকা জুড়ে ওই ফুলের বাগান যেন ফুরোতেই চায় না! তাই প্রায় মিনিট খানেক ধরে ‘স্লো মোশান’-এ দৌড়ানের ছবির নায়ক-নায়িকা। আর তাতেই কেটে যেত গানের কয়েকটা লাইন।
ফুলের বাগান দেখতে অনেকেই ছোটেন কাশ্মীর কিংবা সিকিম। কিন্তু জানেন কি ঘরের কাছে বাংলাতেই রয়েছে বাহারি ফুলের বাগান! বিঘার পর বিঘা জুড়ে ছড়িয়ে নানা রঙের লক্ষ লক্ষ বাহারি ফুল। ঘরের কাছেই রয়েছে বাংলার ‘ফুলের উপত্যকা’ ক্ষীরাই।
লাল মাটির পথ, বাহারি ফুলের চাষ, মৌমাছির গুঞ্জন—সব মিলিয়ে ক্ষীরাই এখন বাংলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাই পৌঁছানোও খুব সহজ। হাওড়া থেকে খড়গপুর কিংবা মেদিনীপুর লোকালে চেপে পৌঁছে যান ক্ষীরাই। পাঁশকুড়ার পরের স্টেশনই ক্ষীরাই। স্টেশনে নেমে রেললাইন ধরে পাঁশকুড়ার দিকে প্রায় ২ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে কংসাবতী নদী। নদীর দু’ধারে চাষ হচ্ছে ফুল। কাঁসাই ব্রিজ পার করলেই পৌঁছে যাবেন ফুলের স্বর্গরাজ্যে। পাঁশকুড়া স্টেশনে নেমে টোটো চেপেও পৌঁছে যেতে পারেন।
ক্ষীরাই পৌঁছালেই চোখে পড়বে শুধু ফুল আর ফুল। জ়িগজ়্যাগ প্যাটার্নে জমির পর জমি চাষ হয়েছে নানা রঙের গাঁদা। এখানে পর্যটকদের স্বাগত জানানো হয় ফুলের তৈরি টায়রা, বেল্ট ও মালা দিয়ে। খুব কম দামেই মিলবে সেগুলো। মাইলের পর মাইল চাষ হয়ে হয়েছে ক্যালেন্ডুলা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি শীতকালীন ফুল। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কসবতী নদী। যদিও এই মরশুমে নদীতে জলের দেখা পাবেন না। বর্ষার সময় এই নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। তবে এখন গেলে কাঁসাই ব্রিজের উপর দিয়ে ঝড়ের গতিতে ট্রেন চলার আওয়াজ শুনতে পাবেন।
বর্ষা শেষ হলেই শুরু হয় শীতের ফুল গাছ চাষের ব্যবস্থা। দুর্গাপুজো শুরুর কিছুদিন আগেই বীজ ছড়ানো হয়। নভেম্বরের শেষ থেকে গাছে কুঁড়ি ধরে। আর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে দেখা যায় ফুলের মেলা।
দৈনন্দিন ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়ে কোনও শীতের বিকালে ক্ষীরাই ঘুরে আসতে পারেন। এখানে এখনও অবধি থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। একবেলার জন্য ক্ষীরাই ঘুরে আসতে পারেন। তবে, যে হারে এখন ক্ষীরাইয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাতে একটু সমস্যার মুখে পড়ছেন চাষীরা। তাই স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এগিয়ে আসছেন এখানকার পর্যটন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য।