দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: মৃত্যু, জীবনের চরম সত্য। প্রিয়জনকে চিরবিদায় জানানো যেমন বেদনাদায়ক, তেমনিই তাঁকে শেষবারের মতো সুন্দর ও শান্তভাবে দেখা পরিবারের কাছে একান্ত কাম্য। সেই চাহিদা থেকেই ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘পোস্ট-মর্টেম মেকআপ’ বা মৃত্যুর পর মৃতদেহের সাজসজ্জা। এই প্রক্রিয়া শুধু একটি প্রসাধন নয়, বরং এটি এক ধরনের শিল্প, যেখানে সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানবিকতা এবং মর্যাদাও জড়িয়ে আছে। পোস্ট-মর্টেম মেকআপ, যাকে "রেস্টোরেটিভ আর্টস" বলেও ডাকা হয়, তার মূল উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যেন তিনি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন। সাধারণত এই মেকআপে এমন শেড এবং টেক্সচার ব্যবহার করা হয়, যা মৃতদেহের ত্বকে স্বাভাবিক ও জীবন্ত ছাপ ফেলে। কারণ মৃত্যুর পর শরীরের উষ্ণতা ও রক্তসঞ্চালন থেমে যাওয়ায় ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক ও বিবর্ণ। ফলে সাধারণ মেকআপ তখন আর ত্বকে বসেনা। এজন্য এই বিশেষ মেকআপের প্রয়োজন হয়, যা মৃতদেহে সহজে বসে এবং স্বাভাবিক সৌন্দর্য এনে দেয়।
বর্তমানে টিকটক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এই মেকআপ প্রক্রিয়ার ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে, যা মানুষকে এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন ও কৌতূহলী করে তুলছে। অনেক মেকআপ শিল্পী তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে কীভাবে তারা মৃতদেহে হালকা কনট্যুর, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক কিংবা চুল ঠিক করার মাধ্যমে নিজের প্রিয়জনকে স্নিগ্ধ, পরিচিত রূপে বিদায় জানাচ্ছেন।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে এক মার্কিন মেকআপ শিল্পীর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে একজন মৃত মহিলার মুখে মেকআপ করতে দেখা যায়। ভিডিওটি মর্গের মতো একটি পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে শিল্পীর মুখে দেখা যায় পরিপূর্ণ নিষ্ঠা ও গভীর আন্তরিকতা। মৃতদেহে মেকআপ করার সময় তার মুখভঙ্গি এবং শরীরী ভাষা থেকে বোঝা যায়, তিনি কাজটিকে কেবল একটি পেশাগত দায়িত্ব নয়, বরং একধরনের সম্মান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। ভিডিওটির মাধ্যমে তিনি ‘স্থায়ী চেহারা’ বা ‘পার্মানেন্ট লুক’-এর গুরুত্বকে তুলে ধরেন এবং এই কাজকে সম্মানজনক হিসেবে আখ্যা দেন।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “পরিবারগুলিকে তাদের সবচেয়ে দুঃখের মুহূর্তগুলিতে সাহায্য করতে পারাটা সম্মানের। আমার এই মেকআপ পরিষেবা নিশ্চিত করে যে, সকলেই তাঁদের প্রিয়জনের বিদায় পর্ব এক অপরূপ স্নিগ্ধতা ও পরম শান্তির সাথে উপস্থাপন করবেন ।” এই উক্তিটি অনেক দর্শকের হৃদয়ে নাড়া দেয় এবং সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভিডিওটি দ্রুতই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং শুরু হয় নানান মন্তব্যের ঢল। অনেকে এই কাজটিকে বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর বলে আখ্যা দেন। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “আমি কখনই বুঝতে পারব না যে কিছু লোক কীভাবে এটিকে একটি ভাল ধারণা বলে মনে করে।” অপরদিকে, বেশ কিছু দর্শক এই উদ্যোগকে প্রশংসার চোখে দেখেছেন। কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, এই ধরনের পরিষেবা কতটা অর্থবহ হতে পারে। একজন মন্তব্যে লেখেন,“এটা দেখে আমি খুবই আগ্রহী! আর এই প্রক্রিয়া চলাকালীন তুমি খুব খুশি বলে মনে হচ্ছিলে,” যা থেকে বোঝা যায়, শিল্পীর মধ্যে এই কাজে একধরনের আত্মতৃপ্তি কাজ করে। অপরদিকে একজন লেখেন, “আমার দাদীর শেষ সাজ আমি নিজ হাতে করেছিলাম, সেটি আমার জীবনের সবচেয়ে অর্থবহ কাজগুলোর একটি।” তবে অন্যদিকে একজন মন্তব্য করেন, “তাঁর কোনও মেকআপের প্রয়োজন নেই, তাঁর কেবল প্রার্থনা দরকার যাতে তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকে।” এই বক্তব্য একধরনের ধর্মীয় অনুভূতির প্রকাশ, যা বিষয়টিকে আরও জটিল ও আলোচনাযোগ্য করে তোলে।
পোস্ট-মর্টেম মেকআপ কেবল মৃতদেহের উপর একটি প্রসাধনী প্রয়োগ নয়। এটি একটি শেষ শ্রদ্ধা, যা পরিবারের ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মৃত্যুর মতো এক চরম বাস্তবতাকেও যদি আমরা সৌন্দর্য, সহানুভূতি এবং সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারি—তাহলে হয়তো সেই বিদায় কিছুটা হলেও শান্তিময় হয়ে ওঠে।