দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ লোকসভা ভোটের আগে তো বটেই, গত ৪ জুন ভোটের ফলপ্রকাশের ঠিক আগেও অনেকটাই আতঙ্কে ছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। আর ততটাই আশান্বিত ছিল বিজেপি। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফলাফল, তার পরবর্তী ঘটনাবলী, সর্বোপরি বিধানসভা ৪০ দিন না কাটতেই আমূল বদলে গেল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক চালচিত্র।
২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকে দিল্লির শাসকদের মোকাবিলা করতেই ‘দিদি’র অনেকটা সময় লেগে গেছে। সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি একদিকে লাগাতার তল্লাশি ও ধরপাকড় চালিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে জুড়েছিল বিচারব্যবস্থার কড়া পর্যবেক্ষণ।
এরকম অবস্থাতেও বেহাল বিজেপি-কে লোকসভা ভোটে ভালো ফল দেওয়ার চেষ্টায় রাজ্য নেতাদের দাবি মেনে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। নির্বাচনী নির্ঘন্ট তৈরি থেকে প্রার্থীচয়ন—এসবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ইচ্ছেকে। প্রচার বারবার এ রাজ্যে এসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসেছেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা-সহ দলের কেন্দ্রীয় কিছু নেতা। কিন্তু এত কিছুর পরেও ’১৯-এর লোকসভায় বিজেপি-র প্রাপ্ত আসনের চেয়েও ’২৪-এ এ রাজ্যে কমে যায় ছ’টি আসন। গোটা দেশেও ফলাফল যথেষ্ঠ আশাপ্রদ হয়নি।
রাজনীতিতে এমন সুযোগ কেউ হাতছাড়া করেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও করেননি। লোকসভা ভোটের পর থেকে গত প্রায় এক মাস সময়ে ‘দিদি’ যেভাবে নিজের দলকেই বকাঝকা শুরু করেছেন, পুলিশ, আমলা ও দলের একাংশকে ‘লোভী’ বলছেন, তাতে একটা ব্যাপার পরিষ্কার—বাংলায় বিরোধী পরিসর যেটুকু দখল করে রয়েছে বিজেপি, তা আরও ছোট করে দিতে চান তিনি। অর্থাৎ তিনি শাসক। তিনিই বিরোধী।
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যদি তৃণমূলের একাংশের সমালোচনা করেন, তাহলে শুভেন্দুবাবুদের হাতে পড়ে থাকল কী? উপ নির্বাচনে চার-শূন্য ফলাফল এহেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও শক্তিশালী করে দিল।
প্রশ্ন উঠতে পারে কেন? তার কারণ পরিষ্কার। একে তো বাংলায় আপাতত মজবুত বিরোধী বলে কিছু থাকল না। অন্তত আপাতত কিছুদিন তো নয়ই। দুই, ছাব্বিশ সালে বিধানসভা ভোটের আগে দল ও সরকার গুছিয়ে নিতে বড় সুযোগ পেয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং, অন্তর্কলহে দীর্ণ রাজ্য বিজেপি-র পক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিধানসভা ভোটে লড়াই করাটা খুবইয়কঠিন হয়ে গেল।
সেভাবে দেখলে মাঝে সময় বছর দেড়ের সামান্য বেশি। তার মধ্যেই জমে উঠবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকের কাঠি। দেখা যাক, মজবুত, উজ্জীবিত তৃণমূলকে কোনঠাসা করতে কোন পথ নেয় বিজেপি।