দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ মুসলিম প্রধান দেশ সৌদি আরবের আবু ধাবিতে তৈরী হচ্ছে প্রথম হিন্দু মন্দির। বিশালাকার এই মন্দির নির্মাণে খরচ আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকা। আবু ধাবিতে ৫৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হচ্ছে হিন্দু মন্দির। ভারতীয় মন্দিরের আদলেই তৈরি করা হবে এই মন্দির। মধ্য প্রাচ্যে এটিই প্রথম হিন্দু মন্দির।
এটি স্বামীনারায়ণ মন্দির। পাথর দিয়ে তৈরি হবে সম্পূর্ণ মন্দিরটি। পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম মন্দির হবে এটি। ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে মন্দিরটি। মন্দিরে অপূর্ব কারুকার্য খোদাই করা থাকবে। গোলাপী বেলেপাথর ব্যবহার করা হবে মন্দির তৈরিতে।
মন্দির তৈরির জন্য ৪০ হাজার ঘনমিটার মার্বেল, ১,৮০,০০০ কিউবিক মিটার স্ট্যান্ডস্টোন এবং ১.৮ মিলিয়ন ইট লাগবে। এখনও পর্যন্ত ৪ লাখ ঘণ্টা পরিশ্রম করেছেন শ্রমিকরা। মন্দির কমপ্লেক্স তৈরি হতে আরও অনেকটা সময় বাকি রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বুকে এটিই হবে প্রথম হিন্দু মন্দির যা প্রচুর ভক্তকে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মন্দিরের উচ্চতা হবে ১০৮ ফুট। পশ্চিম এশিয়ার সর্ববৃহৎ হিন্দু মন্দির হতে চলেছে এটি। মন্দিরের নকশা বৈদিক স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অনেক মূর্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন খোদাই করে সেই মূর্তিগুলি তৈরি করেছেন শিল্পীরা। সেগুলি আবু ধাবিতে পাঠানোর কাজও শুরু হয়েছে। এই মন্দির হয়ে উঠবে ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয়। আবু ধাবিতে নির্মিত গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর কাল্পনিক সঙ্গমস্থলে এটি প্রায় প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর জল ঢালা হবে এই মন্দিরে। মন্দিরের জাঁকজমক ভারতের মন্দিরের চেয়েও বড় হবে।
২০১৮ সালে এই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি তাঁর সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সফরের সময় ২০১৮ সালে পিএপিএস স্বামীনারায়ণ মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। মন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। বিষয়টি নিয়ে টুইটও করেছিলেন জয়শঙ্কর। মন্দিরের নকশায় সাতটি স্ফিয়ার একত্রিত হবে। প্রতিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতীক। এই নকশার আসল লক্ষ্য হল বিদেশের মাটিতে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তাকে বিশ্বের সামনে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। ২০১৫ সালে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সফর করেছিলেন, তখন সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর রাষ্ট্রপতি শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান এই মন্দিরের জন্য জমি উপহার দিয়েছিলেন।
মন্দিরে তৈরি করা শিল্পকর্মগুলি রামায়ণ, মহাভারত এবং ভারতীয় মহাকাব্য সম্পর্কিত ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এছাড়া এই মন্দিরে উটের শিল্পকর্ম অন্তর্ভুক্ত করে আরব দেশের ছোঁয়াও দেওয়া হয়েছে। সাত চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরের কমপ্লেক্সে একটি দর্শনার্থী কেন্দ্র, প্রার্থনা গৃহ, লাইব্রেরি ক্লাসরুম, কমিউনিটি সেন্টার, মজিলিস, অ্যাম্ফিথিয়েটার, খেলার মাঠ, বাগান, বই এবং উপহারের দোকান এবং ফুড কোর্ট থাকবে। এই মন্দির নির্মাণে কোনও ইস্পাত বা কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে না। মন্দিরটিকে এত শক্তিশালী করা হচ্ছে যে এটি আগামী ১০০০ বছর ধরে অক্ষত থাকবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এখন শীঘ্রই এই মন্দির সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হবে। পরের বছর অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ উদ্বোধন হতে পারে। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে এই মন্দির।