যখন আমাদের হৃদযন্ত্র দেহের
অন্যান্য প্রত্যঙ্গগুলিকে সক্রিয় রাখতে ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না তখন তাকে
বলে হার্ট ফেলিওর। ক্ষতিগ্রস্ত হৃদযন্ত্র এবং তার শিথিলতার কারণেই হার্ট ফেলিওর ঘটে।
হার্ট ফেলিওর ও হার্ট অ্যাটাক এক নয়। হার্ট অ্যাটাক সাধারণত হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের
পথে রক্তনালীতে বাধার ফলে ঘটে থাকে। হার্ট যদি রক্ত সঞ্চালন করতে অসমর্থ হয়ে তাহে হার্টফেল
ঘটে।
এর ফলে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ রোগী মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই মারা যায় এবং অসংখ্য রোগীকে অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এসমস্ত রোগীর শতকরা অন্তত পঞ্চাশ ভাগের মৃত্যু হয় হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকের ফলে আর তাই তাদের প্রয়োজন নিবিড় ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
- ইস্কিমিক হার্ট অর্থাৎ আগে
হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বা অ্যাথোরোস্কোপিহার্টের ক্ষেত্রে।
- ভাস্কুলার হার্ট ডিজিজ।
- পেরিকার্ডাইটিস মায়োকার্ডাইটিস।
- বংশগত হার্টের অসুখ।
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস,
ডাইস্লিসিডামিয়া, ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ, হাইপার বা হাইপা থাইরয়েড, স্থুলত্ব, মদ্যপান
ও ড্রাগের নেশা।
সব বয়সেই হার্টফেল হতে পারে।
বয়স্ক লোকেদের ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি বেশি হলেও অল্পবয়স্করা যাদের আগে থেকেই হার্টের অসুখ
আছে, তাদের ক্ষেত্রেও এটা ঘটতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্যান্য জনজাতীর তুলনায় ভারতীয়দের
মধ্যে হার্টফেল বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা পাঁচ বছর আগেই বেড়ে যায়।
সামান্য পরিশ্রম, যেমন শোওয়া,
সামনে ঝোঁকা ইত্যাদিতে ক্লান্তি বোধ করা, গোড়ালি কিংবা পা ফোলা, অসম্ভব ক্লান্তি, প্রচণ্ড
কাশি বা বুকে ব্যথা, মুখের ফোলা ভাব, অসম্ভব ঘাম এবং শীতবোধ।
প্রতিরোধের উপায়।
কায়িক পরিশ্রম করা যেমন -
হাঁটাচলা, জগিং বা সাইক্লিং করা। অতিরিক্ত সেবন না খাওয়া, ফাস্ট ফুড বর্জন ও ওজন নিয়ন্ত্রণে
রাখা। ব্লাড প্রেশার নিয়মিত চেক করা।
ডাক্তারি পরীক্ষা, এন.টি,
প্রো বি এন সি, ইসিজি সহ সাধারণ রক্ত পরীক্ষা এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফের মতো ইমেজিং পদ্ধতি
দ্বারা।
মেডিকেল নির্দেশাবলী অনুযায়ী
চিকিৎসা তৎসহ লাইফ স্টাইল নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, চেক আপ এবং প্রয়োজন বোধে বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা।
হার্ট ফেলিওর
ও ইনজেকশন ফ্রাকশন করাতে চিকিৎসাশাস্ত্রের চারটি স্তম্ভ হল ARNI,
Beta Blocks, MRA এবং SGLT ইনটিরিয়ার্স/প্রস্রাব বাড়ানো ছাড়াও রক্ত
জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে এগুলির কার্যকারিতা প্রমাণিত। রোগীরা তাদের প্রয়োজন অনুসারে Blood
Thinner, Anthy Protentive, Antidiabetic গ্রহণ করে থাকেন। প্রচলিত ওষুধ ছাড়াও রোগীর
হার্টফেল করে আকস্মিক মৃত্যু ঠেকাতে ও লক্ষণগুলি কমাতে কিছু কৌশল নির্ভর থেরাপির প্রয়োজন
পড়ে।
ICD হৃদরোগে আকস্মিক মৃত্যু ঠেকাতে রোগীদের
এই থেরাপী প্রদান করা হয়। এই ডিভাইসটি রোগীর বুকের বাঁ দিকে দুটি তারের সাহায্যে হৃদযন্ত্রের
প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করানো হয়। হার্ট যখনই কোনো বেতার সংকেত দেয় তখনই ঐ ডিভাইস শক দিয়ে
ICD-কে রুখে দেয়। এই শকে ভয়ের কিছু নেই। বরং এটি জীবনদায়ী।
CRT - এই ডিভাইসটি হঠাৎ হার্টফেল করা রোগীর
ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তিনটি তার হৃদযন্ত্রের প্রকোষ্ঠে ঢোকানো হয়। এটি
কাজ করে মূলত হার্টের দুটি ভেন্টিকুলারের সমতা রক্ষা করা। এই ডিভাইস ব্যবহার করে অসংখ্য
হার্ট পেসেন্ট আকস্মিক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। ICD ও CRT-র সম্মিলিত প্রয়োগের
ফলে SCD-র আশঙ্কা অনেকাংশে কমে গেছে। একই সঙ্গে উন্নতি হয়েছে LVEF-এর ক্ষেত্রে। এছাড়াও
কোনো কোনো ক্ষেত্রে IABP এবং কিছু LVAD ডিভাইসের প্রয়োজন পড়তে পারে। শেষ থেরাপি অবশ্য
হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা হৃদযন্ত্রের প্রতিস্থাপন।